রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৩

কিসের আঁতাত, কোথায় আঁতাত ??




রাজাকার শিরোমণি গোলাম আজমের মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় হয়েছে গত ১৫ই জুলাইনা, প্রত্যাশিত বিচার আমরা পাইনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে এই ঘৃণ্য নরপশুর ৫ ধরণের ৬১ টি অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও মহামান্য আদালত রায় দিয়েছেন ৯০ বছর কারাদন্ড। বিবেচনায় নেয়া হয়েছে আসামীর বয়সকে। অথচ দেশবিরোধীদের আইকন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মাস্টারমাইন্ড খ্যাত গোলাম আজমের সর্বোচ্চ শাস্তি, ফাঁসির রায়ই শুনতে চেয়েছিল দেশপ্রেমী জনগণ এই রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করবে রাস্ট্রপক্ষ। আশা করি আপীলের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত হবে এই দেশদ্রোহী পাকি দোসরের।  
এই রায়কে সরকার তথা আওয়ামীলীগের আঁতাত হিসেবে দেখছেন অনেকে। ভাবছেন নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার জন্যই গোলাম আজমকে মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচানো হয়েছে। কোন যুক্তিতে তার এটা ভাবছেন তা আমার বোধগম্য হচ্ছে নানিজের জীবন বিপন্ন করে জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির কলঙ্ক মোচনের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছেন। এই লক্ষ্যে গঠন করেছেন শক্তিশালী ট্রাইবুন্যাল যা স্বাধীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার নিয়োগ দিয়েছেন প্রসিকিউটরদের। তাদের কাজ ছিল অপরাধ প্রমাণ করা এবং তা তারা করতেও পেরেছেন। রায়  দিয়েছেন বিচারকরা এবং কিসের প্রেক্ষিতে দিয়েছেন তাও উল্লেখ করা আছে রায়ে। তাহলে আওয়ামীলীগ আঁতাত করলটা কোথায়? প্রসিকিউটররা যদি অপরাধ প্রমানে ব্যর্থ হতেন তাহলে সরকারের দোষ দেয়া যেত যে তারা যোগ্য প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়নি। কিন্তু সেটা তো হয়নি। আগের চারটি রায়ের মত গোলাম আজমের ক্ষেত্রেও রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সন্দেহাতীত ভাবে অপরাধ প্রমানে সক্ষম হয়েছেন। তাহলে সরকার বা আওয়ামীলীগের দোষ কোথায়? আমরা কেন ভুলে  যাচ্ছি আদালত সরকারের কথায় চলে না, আবেগ দিয়েও চলে না। আদালত বিচার করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তাহলে আওয়ামীলীগকে কেন বলির পাঠা বানানো হচ্ছে?
অনেকে বলছেন এই রায় তো আসলে ৯০ বছরের কারাদন্ড না, আগামী নির্বাচনের পরেই মুক্তি পেয়ে যাবে গোলাম আজম। তারমানে আপনারা ধরেই নিচ্ছেন আগামী নির্বাচনে জামাত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় আসলে শুধু মুক্তি কেন হয়ত পুরষ্কারও জোটে যেতে গোলাম আজমের কপালে
 এটা আমিও বিশ্বাস করি। রাজাকারদের গাড়িতে পতাকা যেহেতু তারা তুলে দিতে পেরেছে অতএব যুদ্ধাপরাধীদের  তারা মুক্তি দিবে এটা নিশ্চিততবুও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে তো কিছু বলা হচ্ছে নানাস্তিক ট্যাগ দিয়ে এই  আওয়ামীলীগের যোগ্য প্রার্থীদেরকেই হারানো হয়েছে পাচ পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। তবুও তো সরকার এই বিচারকাজ বন্ধ করেনি। তারপরও সবদোষ দেয়া হচ্ছে আওয়ামীলীগকেইআপনারা পারেনও ভাই, কি অদ্ভুত আপনাদের হিসাব-নিকাশ
মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির পিতাই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করেছিলেন। ৭৫ এ নির্মম ভাবে উনি নিহত হওয়ার পর স্তব্ধ হয়ে যায় সে কাজ। এরপর সুদীর্ঘ তেত্রিশ বছর পর ২০০৮ সালে সেই বিচারের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন তারই যোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। ৭৫ পরবর্তী সময়ে দুই ধাপে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আছে আজ পর্যন্ত সাড়ে নয় বছর এর মত। বাকি বত্রিশ বছরই দেশ চালিয়েছে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী। কই, কেউ তো এই বিচার করেনি
নূন্যতম উদ্যোগ পর্যন্ত গ্রহন করেনি। উপরন্তু  নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে পুনর্বাসিত করেছে দেশবিরোধী জামাত চক্রকে তাদের আশীর্বাদ পেয়েই ফুলে ফেপে উঠেছে জামাত, দেশব্যাপী  বিস্তৃত করেছে তাদের কালো থাবা। আজ যারা আওয়ামীলীগ কে গালি  দিচ্ছেন, আঁতাত খুজে বেড়াচ্ছেন তারা কই ছিলেন এই বত্রিশ বছর? নাস্তিক অপবাদ সহ্য করেও এই সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজ চালিয়ে  যাচ্ছে তবুও আপনাদের সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে হচ্ছে এই সরকারকেই, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামীলীগ কেইহাস্যকর ভাই আপনাদের যুক্তি, হাস্যকর আপনাদের চেতনার আস্ফালন।  
নির্বাচনী ইশতেহারে কথা বলবেন? আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদের নিরবাচনী ইশতেহারের ৫.১ ধারায় পরিষ্কার ভাবে বলা ছিল যে নির্বাচিত হলে মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার নিশ্চিত করবেনএটা এই সরকার করেও যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত তিন জনের ফাঁসি, একজনের যাবতজীবন কারাদণ্ড ও সর্বশেষ গোলাম আজমের ৯০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। ইশতেহারে কোথাও উল্লেখ ছিল না সরকার সবার ফাঁসি নিশ্চিত করবেকারণ সেটা বলা সম্ভবও না। সরকার শুধু বিচারের ব্যবস্থাই করে দিতে পারে। রায় কি হবে সেটা আদালতের ব্যাপার। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ  নেই। করলে সেটা হিতে-বিপরীতই হবে।
অনেকে ন্যুরেমবারগ আদালতের উদাহরন টেনে বলবেন যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে নব্বই বছরের অধিক বয়সীকেও  ফাঁসি দেয়ার নজির আছে। একবার ভেবে দেখুন তো তখনকার প্রেক্ষাপট কি ছিল। নাৎসি বাহিনী তখন নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল জার্মানিতে, নাৎসিদের শেষ চিহ্নটুকুও ধুয়েমুছে ফেলা হয়েছিল ততদিনে
তারপর হয়েছিল সে বিচার। অথচ  আমাদের দেশে এখনো বহাল তবিয়্যতে রাজনীতি করছে জামাত, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করা বিএনপি তাদের মূল অংশীদার৭৫ পরবর্তী সময়ে তাদের শিকড় বিস্তার লাভ করেছে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক  অঙ্গনেও। এই বিচার করতে গিয়ে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে অনেক দেশী ও আন্তর্জাতিক চাপ সহ্য করে যেতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের এই বিচার পর্যবেক্ষণ করছেন দেশ বিদেশের অনেকেই। সরকার যদি এর কাজে হস্তক্ষেপ করতে যেত তাহলে তা সবার কাছেই তা বিতর্কিত হত। যা কোনভাবেই কাম্য নয়।    
আতাতের কথা বলছেন? ৯১ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামাতের সম্মিলিত আসন সংখ্যা বিএনপির থেকেও বেশি ছিল। চাইলেই আওয়ামীলীগ তখন আঁতাত করে সরকার গঠন করতে পারত
কিন্তু  জাতির পিতার কন্যা শেখ  হাসিনার রক্তে আপোষ বলে কোন কথা নেই। উনি তখন হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রীর গদি ছেড়ে দিয়েছিলেন, তবুও আঁতাত করেননি দেশবিরোধী জামাতের সাথে। তারপরও কারণে অকারণে  আঁতাত খুজে বেড়ান অনেকেই। কাদম্বিনী যেমন মরিয়া প্রমাণ করেছিল যে সে মরে নাই, তেমনি মনে হয় আওয়ামীলীগ কেঊ একবার আঁতাত করেই প্রমাণ করতে হবে যে আওয়ামীলীগ আগে কখনো আঁতাত করে নাই। এছাড়া অন্য কোন উপায় দেখি না। আরেকটা উপায় অবশ্য আছে। সবাই মিলে বিএনপি জামাত জোটকেই আগামীবার ক্ষমতায় নিয়ে আসা, তাহলে হয়তো খুব ভাল বিচার হবে তখন। এক দড়িতেই ফাঁসি দিয়ে দিবে অনেকের ! তবে কাদের ফাঁসিতে ঝুলাবে সেটা সময়ই বলবে। আর কিছু বলার নেই আমার   

আমাকে আওয়ামী দালাল বলে গালি দিয়ে লাভ নাই। আওয়ামী লীগের দালালী রক্তে মিশে আছে, উত্তরাধীকার সূত্রে পাওয়া। কারণ এই দুখী বাংলার ভালো চাইতে হলে আওয়ামীলীগের দালালীই করতে হবে। এছাড়া অন্য কোন উপায় নাই।
Top of Form
Bottom of Form

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন