শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

আইভী রহমানঃ আমৃত্যু সংগ্রামী একজন মানুষের নাম

২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে এক কলঙ্কময় দিন। সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে আওয়ামীলীগের সভানেত্রী, বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এক নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিলন। আল্লাহর অশেষ রহমতে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও সেই হামলায় নিহত হন আওয়ামীলীগের ২৪ জন নিবেদিন প্রাণ নেতাকর্মী। সেই হামলায় গুরতর আহত হন তৎকালীন মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমান। হামলায় উনার দুই পা উড়ে যায়। প্রায় ৭২ ঘন্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে ২৪ শে আগস্ট দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আইভী রহমান। শেষ হয়ে যায় আমৃত্যু সংগ্রামী এক নেত্রীর জীবনের গল্প। এ চলে যাওয়া বড় অসময়ে চলে যাওয়া, জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি। 


ষাটের দশকে আইভী রহমানের রাজনৈতিক জীবনের শুরু। নিজ মেধা, প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতায় দ্রুতই আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসেন। ছিলেন সংগঠন অন্তঃপ্রাণ। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করে গিয়েছেন। দেশ আর দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন তিনি। সারাক্ষন দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে গিয়েছেন। চমৎকার বক্তৃতা দিতে পারতেন। তবে বক্তৃতা করতেন কম। মঞ্চে পারতপক্ষে উঠতেন না। বেশিরভাগ সময়েই থাকতেন মঞ্চের সামনে উপবিষ্ট তাঁর প্রাণপ্রিয় কর্মীদের সাথে। ২১ শে আগস্টে সকলের অনুরোধ সত্ত্বেও মঞ্চে উঠেন নি। কর্মীদের সাথে বসে, জীবনের চেয়ে বেশী প্রিয় সংগঠনের ব্যানার হাতে রেখেই চিরবিদায় নিয়েছেন।


দারুণ কষ্টসহিষ্ণু ছিলেন আইভী রহমান। রাজনৈতিক কারণে জীবনে অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে, কারাবরণ করতে হয়েছে। কিন্তু কখনোই ভেঙ্গে পড়েননি। হাসিমুখের দেশের স্বার্থে নিজের যথাসর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন। মতিয়া চৌধুরীকে সাথে নিয়ে এরশাদ আমলে একবার দশ মাইল পথ পায়ে হেটে মাদারীপুরের কালকিনিতে আওয়ামীলীগের জনসভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন। এমন দৃষ্টান্ত আর কয়জন রাজনীতিবিদের আছে?

জিল্লুর রহমানের সাথে ছিল আইভী গভীর প্রেমময় সম্পর্ক। জিল্লুর রহমান তাঁর স্ত্রী স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ আইভীকে হারিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি ভয়ানক দুঃখ কস্ট, বেদনা ও কঠিন শূন্যতা আর হাহাকারের মধ্যে বেঁচে আছি। আমার বুকের পাঁজর ভেঙ্গে গেছে। ভাবনায় কত প্রহর কেটে যায়, মনে পড়ে যায় কত স্মৃতি, কত কথা। তবে যে উদ্দেশ্যে সে প্রাণ দিয়েছে এর মধ্যে একটি সান্ত্বনা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।’ আইভী রহমানের মৃত্যু জিল্লুর রহমানের মুখ থেকে চিরতরে হাসি কেড়ে নিয়েছিল। বনানীতে আইভী রহমানের কবরের পাশে একটি স্থায়ী চেয়ার বানিয়েছিলেন জিল্লুর রহমান। প্রায়ই গিয়ে সেখানে বসে সঙ্গ দিতেন কবরে শুয়ে থাকা প্রিয়তম স্ত্রীকে।

রাজনৈতিক সফলতার পাশাপাশি একজন সফল মা ছিলেন আইভী রহমান। রাজনৈতিক শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের তিন সন্তানকে তিনি মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলেছেন। তাঁদের প্রত্যেকেই দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

আইভী রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল আকর্ষণীয়। কৌতুক প্রিয় ছিলেন। সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। নিজের চারপাশটাও মাতিয়ে রাখতেন রাখতেন সবসময়। গাছ আর ফুল খুব প্রিয় ছিল তাঁর। নিজে যেমন সুন্দরী ছিলেন তেমনি তাঁর ছিল একটি সৌন্দর্য পিপাসু মন। নিজের বাসাটা মনের মত গোছ গাছ করে রাখতেন। গভীর মমতায় আগলে রাখতেন নিজের সংসার, নিজের সংগঠন।

আইভী রহমান ছিলেন সর্বদিক দিয়ে সফল একজন মানুষ। তাঁর অকালে চলে যাওয়াতে বাঙালি জাতির যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনোই পূরন হবার নয়। উনার জন্যই বলা যায়,

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই ওরে ভয় নাই
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তাঁর ক্ষয় নাই ।।’

বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৩

ডঃ ইউনুসঃ মুনাফাখোর এক স্বার্থলোভীর নাম

একটা কথা কিন্তু আপনাকে মানতেই হবে দাদা। ঝোপ বোঝে কোপ মেরে নগদ ধান্দা করে নেয়াটা ইউনুস সাহেবের থেকে বেশী আর কেউই পারবেনা।

খেয়াল করে দেখেন, ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত দেশব্যাপী সংখ্যালঘু নির্যাতন হল, জঙ্গীহামলা হল, গ্রেনেড হামলা হল, দেশ বারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হল, রাজাকারে দের গাড়িতে পতাকা উঠল অথচ কোন ব্যাপারেই ইউনুস সাহেব টু শব্দটা পর্যন্ত করলেন না। আরামসে বইসা সুদের টাকা গুনতে লাগলেন আর বিশ্ব মোড়লদের পা চাইটা নোবেল বাগায়া নিলেন। যখনই আর্মি বেকড তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলো তখনই উনার রাজনীতি করার ইচ্চা চ্যাগায়া উঠলো। রাতারাতি একখান দলও খুলে ফেললেন। যদিও শেষ পর্যন্ত রাজনীতি অপেক্ষা সুদের ব্যবসা বেশি নিরাপদ মনে হওয়ায় সেটাতেই ফিরে গেলেন।

এই সরকারের আমলেও ইউনুস সাহেব যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে একটা কথা বললেন না, দেশের অন্যান্য সমস্যা নিয়ে কোন কথা বললেন না। ফুলবাবু সাইজা দেশে বিদেশে ঘুইড়া মেডেল মুডেল কিনলেন আর নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য সবজায়গায় দেশের বদনাম করে বেড়ালেন। কারণ একটাই, সরকার তার সুদের ব্যবসায় হাত দিসে। আরেকটা জাতীয় নির্বাচন সামনে। এই অবস্থায় উনার রাজনৈতিক ইচ্ছা আবারও জেগে উঠসে। আজ তার বিলাস বহুল অফিসে এক অনুষ্ঠানে উনি বললেন নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন সম্ভব নয়। কিছুদিন আগে আম্রিকার পররাস্ট্রমন্ত্রীকেও একই কথা বইলা আসছেন উনি।

মিঃ ইউনুস সাহেব, নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আপনি কে? নাকি নিজেকে 'গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল' ভাবেন ? সাহস থাকলে সরাসরি রাজনীতিতে নেমে যান । কচ্ছপের মত মাথা বাইর কইরা দিয়া আসুম নাকি ভাইডি, আসুম নাকি ভাইডি করতেসেন কেন?



বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

বিএনপিঃ একটি ‘পরজীবী’ সংগঠনের নাম



বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, সংক্ষেপে বিএনপি। সামরিক সহায়তায় সেনানীবাসের ভিতরে দলটির জন্ম হয়েছিল। এর গঠনতন্ত্র লিখা হয়েছিল কলমের কালিতে নয়, বন্দুকের বেয়নেট দিয়ে। যে দলের আঁতুড় ঘর হল ক্যান্টনমেন্ট এবং ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল, সে দল কখনোই একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনা। বিএনপিও পারেনি। জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি তাই অন্যের উপর নির্ভর করেই টিকে আছে। প্রয়োজন মত অনেককেই ব্যবহার করেছে আবার প্রয়োজন শেষ হলে ছুড়েও ফেলে দিয়েছে। সবসময় অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে তারা শিকার করেছে। কিন্তু একটি স্বকীয় রাজনৈতিক আদর্শ বা কাঠামো গড়ে তোলতে পারেনি তারা। দলটির নেতাকর্মীরা ‘শহীদ জিয়ার আদর্শ’ নামক একটা টার্ম ব্যবহার করে। কিন্তু কেউই জানেনা এটা কি? দেশ বা গণতন্ত্রের জন্য নয় বরং নিজেদের স্বার্থেই পরজীবীর মত টিকে আছে বিএনপি নামক দলটি। 


সুযোগ্য এবং বিচক্ষন নেতৃত্বের মাধ্যমে বাঙালি কে একটি নতুন স্বাধীন দেশ এনে দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ দেশটির জন্মের মাত্র চার বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সূর্যটি ঢাকা পড়ে পরাধীনতার কালো মেঘে। এই হত্যাকান্ডে পরোক্ষ ভূমিকা ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের। মূলত এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়েই বিএনপির জন্ম নেয়ার পথ সুগম হয়। কারণ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে মেজর জিয়া কখনোই রাষ্ট্রক্ষমতায় বসার সুযোগ পেতেন না এবং বিএনপি নামক দলেরও জন্ম হত না। এই হত্যাকাণ্ডের পর পরই ক্ষমতা লাভ করেননি মেজর জিয়া। কর্নেল তাহের কথিত সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসান জিয়াউর রহমানকে। এর প্রতিদান দিতে বিন্দুমাত্রও দেরি করেননি মেজর জিয়া। সামরিক আদালতের রায়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দেন কর্নেল তাহেরকে। নিজের চলার পথকে করেন কাটামুক্ত।

সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থাতেই কিছু দলছুট ও স্বার্থলোভী মানুষের সমন্বয়ে গড়ে তোলেন বিএনপি। এই দলটির শ্লোগান ভাড়া করে আনা হয় পাকিস্তান থেকে। পাকিস্তান জিন্দাবাদ এর সাথে মিলিয়ে রাখা হয় বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। দলটির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করার জন্য বৈধতা দেয়া হয় যুদ্ধাপরাধী দল জামায়তে ইসলামকে। পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনা হয় জামায়াতের আমীর গোলাম আজমকে। মেজর জিয়া নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি না করলেও তার দলের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে এবং নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল হিসেবে জাহির করার জন্য জিয়াউর রহমান কে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে। সত্যিই সেলুকাস কি বিচিত্র এই বিএনপি।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দৃশ্যপটে আসেন তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার পুঁজি ছিল ‘ভাঙ্গা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জীর গল্প’। এই গল্পকে সম্বল করে করুনা আদায় করেন তিনি। সরকারি টাকায় বাড়ি গাড়ি বাগিয়ে নিয়ে সেনানীবাসের ভিতরেই বাস করতে থাকেন তার দুই ছেলে তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমানকে নিয়ে। ৯০ এর গনঅভ্যুত্থান কে পুঁজি করে আপোষহীন নেত্রীর লেবাশ গায়ে জড়িয়ে ক্ষমতার মসনদে বসেন তিনি। কিন্তু নিজের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে প্রতিনিয়ত তিনি আপোষ করেছেন যার তার সাথে। ২০০১ সালে পুনরায় ক্ষমতার আসার জন্য আঁতাত করেন জামায়াতে ইসলামের সাথে। গড়ে তোলেন চারদলীয় ঐক্যজোট। মৌলবাদী অপশক্তিকে সাথে নিয়ে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় বসেন খালেদা জিয়া। এবার দৃশ্যপটে আসে তার ছেলে তারেক রহমান। দেশটাকে নিজের ব্যাক্তিগত সম্পত্তি মনে করে দুর্নীতি আর কালোবাজারির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে তারেক জিয়ার নেতৃত্বাধীন ‘হাওয়া ভবন’ গং। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত নিজেদের দুঃশাসন কে ঢাকতে একের পর এক হত্যা আর নির্যাতন চালায় তারা বিরোধীদলীয় নেতা কর্মীদের উপর। ৫ বছরের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধ কেউই রেহাই পায়নি তাদের হায়েনারুপী হিংস্র থাবা থেকে। এমনকি জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কে হত্যা করার জন্যও গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এসব কিছুই তারা করেছে দেশটাকে কুক্ষিগত করতে। চিরস্থায়ী ভোগবিলাসের ব্যবস্থা করতে।

বর্তমানে ফিরে আসা যাক। ২০০৮ সালে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে তিন চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। বিএনপি রুপান্তরিত হয়ে কাগুজে বাঘে। রাজপথে রাজনৈতিক কাজে তাদের তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায়নি। বরং সবক্ষেত্রেই তারা নির্ভরশীল হয়ে পড়ে জোটসঙ্গী জামায়াতের উপর। মাঝে মাঝে কিছু হরতাল তারা দিয়েছে কিন্তু হরতাল দিয়ে নিজেরাই রাজপথে নামেনি। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি নিয়ে শাহাবাগে যখন ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ গড়ে উঠে তখন বিএনপি এর অনুকরণ করে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ তৈরির ঘোষণা দেয়, যদিও তা বাস্তবে রুপ নেয়নি। তথাকথিত নাস্তিক ইস্যু নিয়ে হেফাজত ইসলাম যখন মাঠে নামে তখন বিএনপির পালে যেন নতুন করে হাওয়া লাগে। হেফাজতে ইসলামের ৫ই মের ঢাকা অবরোধ আশাবাদী করে তোলে তাদের। খালেদা জিয়া ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন সরকারকে। কিন্তু হেফাজতের অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার সাথে সাথে বিএনপির কূটকৌশলও নস্যাৎ হয়ে যায়। অবশ্য এখনো বিএনপি তথাকথিত নাস্তিক ইস্যু এবং হেফাজতের সমাবেশের কথিত গণহত্যা ইস্যুকে পুঁজি করেই ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। রাজনৈতিক ভাবে কতটা দেওলিয়া হলে একটি দল সবসময় অন্যের উপর ভর করে, অন্যের আইডিয়া ধার করে তাদের রাজনীতি চালিয়ে যেতে পারে তা বিএনপিকে না দেখলে বুঝা যেত না।

সাম্প্রতিক একটা ঘটনা দিয়ে লিখাটা শেষ করছি। গত ১৮ই আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলন আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, “ সংবিধানে যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই নির্বাচন হবে। এ থেকে একচুলও নড়া হবেনা।” স্থির সিদ্ধান্ত বুঝাতে ‘এক চুল নড়া হবে না’ কথাটি ব্যবহার করা হয়। এটি একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ। এর জবাবে খালেদা জিয়া পরদিন বলেন ‘এমন আন্দোলন করা হবে যাতে সরকারের চুল উড়ে যাবে’। চুল উড়ে যাওয়া নামক কোন কিছু জাতি আগে কখনো শুনেনি। বেগম জিয়া এখানেও জননেত্রীর বক্তব্য থেকেই কথা ধার করেছেন। নিজ থেকে কিছু বলার সক্ষমতা এখনো উনার তৈরি হয়নি। হায়রে পরজীবীতা।
 
জননেত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি ফেসবুকে তার নিজের একটি পেজ খুলেছেন এবং এটি ব্যাপক জনপ্রিয়ও হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি এই পেজটাকে অনুমোদনও দিয়েছে। নিশ্চিত থাকতে পারেন অচিরেই খালেদা জিয়া অথবা তারেক জিয়াও ফেসবুক পেজ খুলবেন। অনুকরণ করতে হবে না ? আমি সেই পেজ এর অপেক্ষায় থাকলাম। মজার এক বিষয়ই হবে সেটা।


কথায় বলে, অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু ক্ষুদ্রাকায় তেলাপোকা ঠিকই টিকিয়া আছে। কথাটা বিএনপির জন্য শতভাগ প্রযোজ্য।

মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৩

রক্তে রঞ্জিত ২১শে আগস্ট



২১শে আগস্ট, ২০০৪। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গভীর কলঙ্কজনক দিন। বিএনপি-জামায়াত জোটের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চূড়ান্ত নিদর্শন প্রদর্শিত হয়েছিল এইদিন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে দেশ থেকে চিরতরে নির্মূল করে দেয়ার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে হায়েনা রুপী হাওয়া ভবন গং তার হিংস্রতম রুপ দেখিয়েছিল। গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগের সমাবেশে। অথচ আওয়ামীলীগের সেই সমাবেশ ছিল সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ বিরোধী শান্তিপূর্ণ সমাবেশ।  



সময় ৫টা বেজে ২২ মিনিট। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্য শেষ করছেন। ফটোসাংবাদিকদের অনুরোধে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়ালেন তিনি। ঠিক সেই সময় অস্থায়ী স্টেজ হিসেবে ব্যবহৃত ট্রাককে লক্ষ্য করে চারদিক থেকে একের পর এক গ্রেনেড ছুটে আসতে লাগল। স্টেজে অবস্থানকারী আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মানব ঢাল তৈরি করে রক্ষা করলেন তাঁদের প্রাণাধিক প্রিয় নেত্রীকে। গ্রেনেড হামলা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই জননেত্রীকে তুলে দেয়া হল তাঁর গাড়িতে। কিন্তু ঘাতকের বুলেট সেখানেই তাড়া করল তাঁকে। বুলেটে জর্জরিত হল নেত্রীর গাড়ি। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারালেন জননেত্রীর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় প্রাণে বেঁচে যান জননেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই হামলায় তাৎক্ষনিক ভাবে প্রাণ হারান আওয়ামীলীগের নিবেদিত প্রাণ ১৮ জন নেতাকর্মী। হাসপাতালে নেয়ার পর প্রাণ হারান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী, আপোষহীন নেত্রী আইভী রহমান সহ আরও ৬ জন। আহত হয়েছেন আরও অসংখ্য নেতাকর্মী। অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। এখনো অনেক নেতাকর্মী স্পিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁদের শরীরে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এই ঘৃণ্যতম নিদর্শন পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল। 



নৃশংস এই গ্রেনেড হামলা সংগঠিত হয়েছিল তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে। নূন্যতম নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিলনা সেদিন। হামলা পরবর্তী সময়ে পুলিশ আহতদের উদ্ধারে কোন ব্যবস্থা তো নেয়ই নি উপরন্তু টিয়ার শেল আর রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে উদ্ধারকাজে বাঁধা প্রয়োগ করে। এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় কিন্তু কারও বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর এই ঘটনার প্রেক্ষেতি বলেছিলেন উই আর লুকিং ফর শত্রু। কিন্তু কাউকেই খুজে বের করতে পারেননি তিনি। পারবেনই বা কিভাবে? এই ঘটনায় যে জড়িত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান। এই মামলায় পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীনেতা মুফতি হান্নান তার নিজের জবানবন্দীতেই এই গ্রেনেড হামলায় তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্ল্যেখ করেছেন। 



২১ শে আগস্টের এই গ্রেনেড হামলা কোন বিচ্ছিন ঘটনা ছিল না। এটা ছিল ৭৫ এর ১৫ই আগস্টেরই পরবর্তী রুপ। আওয়ামীলীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে চিরতরে নেতৃত্ব শূন্য করে দেয়াই ছিল এর লক্ষ্য। অবিলম্বে এই গ্রেনেড হামলার পিছনে দায়ী ব্যাক্তিদের খোজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। তা না হলে স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গী শকুনেরা আবারও হামলা চালাবে। ক্ষতবিক্ষত করবে এদেশের মানচিত্রকে, রক্তরঞ্জিত হবে লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা।  

“রক্তাক্ত বাংলাদেশঃ লাঞ্ছিত মানবতা”: ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি জামাত জোটের অপশাসন ও নৈরাজ্যের একটি ক্ষুদ্র স্মারক

২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপশাসন এবং নৈরাজ্যের ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়নতনের সামনের চত্বরে। "রক্তাক্ত বাংলাদেশঃ লাঞ্ছিত মানবতা" শীর্ষক এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে 'জাতীয় যুব পরিষদ'। তিনদিন ব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে আগামী একুশে আগস্ট পর্যন্ত। সময় করে একটি বারের জন্য হলেও ঘুরে যাওয়ার অনুরোধ রইল।

আমরা চাই ক্ষণিকের জন্য আপনি পিছনে ফিরে যান। ফিরে যান সেই নৃশংস সময়ে যখন প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় প্রকাশিত হতো মানবতাকে ভূ-লুণ্ঠিত করার বিভৎস সংবাদ। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারা বাংলাদেশ ছিলো ভয়াল মেঘমালার নিচে। কোলের শিশু থেকে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটি পর্যন্ত প্রতিনিয়ত আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকতেন। দেখে যান ২০০১ সালের নির্বাচন-উত্তর বাংলাদেশের ক্ষত বিক্ষত ছবি, রক্তাক্ত ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ছবি, লাঞ্ছিত মানবতার চিত্র।

আপনি আসুন। বিবেকের চোখ দিয়ে দেখুন কতোটা হিংস্র সময়ে বাস করেছে বাংলার মানুষ সেই সময়ে। ২০০১ থেকে ২০০৬- নরপশুদের ভয়াল থাবা অন্যদিকে ২০০৮ থেকে ২০১৩- মানবতা ও আইনের শাসনের পথে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া। আসুন। ছবিগুলো দেখুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন- আবার কি ফিরে যাবেন সেই শকুন সময়ে?

না।
ছবিগুলো নিয়ে কিছু বলতে চাই না আমরা। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, নিপীড়ন-নির্যাতনের এ ছবিগুলোই আপনার সাথে কথা বলবে। স্থির হয়ে থাকা চোখের সামনে তুলে ধরবে তাদের নির্মম অভিজ্ঞতার কথা।

না।
আপনি যে আলোকচিত্রগুলো দেখবেন সেগুলো উনিশশো একাত্তর সালের নয়। নির্যাতনের এ আলোকচিত্রগুলো ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে নেমে আসা ভয়াল অন্ধকারে তোলা। বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে সারা পৃথিবী যখন শান্তি আর প্রগতির পথে হাঁটা শুরু করেছে, বাংলাদেশকে তখন টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মধ্যযুগীয় বর্বরতায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় মুখ থুবড়ে পড়া মানবতার এক সামান্য উপস্থাপনা- ‘রক্তাক্ত বাংলাদেশ: লাঞ্ছিত মানবতা’।

না।
কোনো বহিঃরাষ্ট্রের আক্রমণের শিকার নয় ছবির চরিত্রগুলো। এ আলোকচিত্রগুলো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের হিংস্র, বর্বর আর কুৎসিত নির্যাতনের স্মারক। ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংসতার কথা স্মরণ করলে গা শিউরে ওঠে যে কোনো মানবতাবোধসম্পন্ন মানুষের। নির্যাতিত, নিহত মানুষগুলোর অপরাধ ছিলো, তাঁরা স্বাধীন রাষ্ট্রে নিজেদের স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগের গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চা করতে চেয়েছিলো। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অভিধানে ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি অনুপস্থিত। হত্যাকে উৎসব ভেবে তারা তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করে। ‘বিভৎসতা’-ই তাদের রাজনৈতিক সৌন্দর্য। বিএনপি-জামাত জোটের কাছে রাজনীতি মানে মিথ্যাচার, সরকার গঠন মানে জনগণ নয়, সন্ত্রাসীদের স্বার্থ রক্ষা।

না।
এ আলোকচিত্রগুলো সম্বন্ধে কোনো কথাই ‘জাতীয় যুব পরিষদ’ বলবে না। আমরা বিশ্বাস করি, যে চোখ দিয়ে আপনি এ আলোকচিত্রগুলো দেখবেন, তা আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না; যে কান দিয়ে আপনি এ ছবিগুলোর কথা শুনবেন তা আপনাকে প্রতারণা করবে না; যে বিবেককে সঙ্গে নিয়ে আপনি ‘রক্তাক্ত বাংলাদেশ: লাঞ্ছিত মানবতা’র গ্যালারিটি অতিক্রম করবেন, তা আপনাকে ভুল সিদ্ধান্ত দেবে না।

হ্যাঁ। আপনি ঠিক ধরেছেন।
‘জাতীয় যুব পরিষদ’ বিশ্বাস করে আসন্ন নির্বাচনে আপনার বিবেক, আপনার প্রতিটি ইন্দ্রিয় নিপীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে রায় দিবে। আপনি যখন যাবেন ভোটকেন্দ্রে, আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে পূর্ণিমার চোখ ঢেকে রাখা মুখচ্ছবি। সাত বছরের একরত্তি মেয়ে রজুফার বোবা দৃষ্টি। বিএনপি-জামাত জোটের হাতে কখনোই নিরাপদ নয় মানবতা, এ প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই আপনি ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন।

আপনার কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ। পাকিস্তানের চোখ দিয়ে নয়, বাংলাদেশের চোখ দিয়ে বাঙালির মানবতাকে দেখুন। মনে রাখবেন, বিএনপি-জামাত জোট হলো পাকিস্তানি বর্বর দূরবীণে চোখ রেখে চাঁন-তারা মার্কা বেঈমান পতাকা দেখার জোট। এরা বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। বাংলাদেশকে পরিণত করতে চায় সন্ত্রাসী আর জঙ্গিগোষ্ঠীর অভয়ারণ্যে।

তারপরও যদি আপনি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন, আপনার ভুলের কারণে যদি বিএনপি-জামায়াত জোট আবার কখনও ক্ষমতায় আসে, তবে মনে রাখবেন- এখানে প্রদর্শিত ১৩১ টি নির্যাতন-নিপীড়নের ছবির সাথে ১৩২ নম্বর ছবিটি হবে হয়তো আপনারই কোনো প্রিয় মানুষের ক্ষত-বিক্ষত কিংবা মৃত কোনো ছবি।
ভাবুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন। আপনি কী নিপীড়ন-নির্যাতন-বর্বরতা আর হিংস্রতার পক্ষে যাবেন?

জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
জয় হোক মানবতার।

রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৩

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনঃ গুরুত্বপূর্ণ দিকসমুহ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আজকের (১৮ই আগস্ট,২০১৩) বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে জাতিকে আরেকটি নতুন সুখবর দিলেন। বাংলাদেশের একসময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল সোনালী আঁশ পাটের দেশী প্রজাতির জীবন রহস্য উদঘাটন করেছেন এদেশের বিজ্ঞানীরা। নিঃসন্দেহে এ এক অভূতপূর্ব অর্জন। বিজ্ঞান ও গবেষণা খাতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার স্পষ্ট নিদর্শন। পাট এখন সম্পূর্ণভাবেই আমাদের সম্পত্তি। আমাদের এই গৌরবের উপলক্ষ্য এনে দেয়ার জন্য আন্তরিক অভিবাদন জানাই ডঃ মাকসুদুল হক ও তাঁর টীমকে। একই সাথে ধন্যবাদ জানাই আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে। কারণ একমাত্র বর্তমান সরকারই এই গবেষণা কাজে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে গেছেন, যা অতীতে আর কেউ দেয়নি। এটা আমার কথা না, স্বয়ং ডঃ মাকসুদুল সাহেব এটা বলেছেন। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানীরাই তোষা প্রজাতির পাটের জীবন রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে সমসাময়িক বেশ কিছু ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। তুলে ধরেছেন এই বর্তমান সরকারের আমলে করা বিভিন্ন উন্নয়নের কথা।

২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহনের সময় বিশ্বব্যাপী বিরাজ করছিল অর্থনৈতিক মন্দা। তারপরও এই সরকারের আমলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে (বর্তমানে মাথাপিছু আয় প্রায় ৯৫০ ডলার), বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, রপ্তানী আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশের বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে ( বর্তমানে ১৬.০৪ বিলিয়ন ডলার)। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র এবারের রোজার ঈদের বাজারেই প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার হাতবদল হয়েছে। দ্রব্যমূল্যও অনেক নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ এই সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহন করে তখন ত্রিশ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। সেই ঘাটতি কাটিয়ে এখন খাদ্য বিদেশেও রপ্তানী করা যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ খাতে অভাবনীয় উন্নতি করেছে এই সরকার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ যখন সরকার গঠন করে তখন দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট। তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার সেটাকে ২০০১ সালের মাঝে ৪৬০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করে। কিন্তু বিএনপি জামাট জোট সরকার এবং তার পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সেটা কমে দাঁড়ায় ৩২০০ মেগাওয়াট। বর্তমান মহাজোট সরকার আবার সেটাকে ৮৬০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। গড়ে এখন প্রতিদিন ৬০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। যার সুফল ভোগ করছেন দেশবাসী। লোডশেডিং নেমে এসেছে ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। নিয়মিত বিদ্যুৎ প্রাপ্তির ফলে কল কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট হচ্ছে ব্যাপকভাবে।

শিক্ষা খাতেও এই সরকারের অবদান ঈর্শনীয়। দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রাসে সোয়া কোটি ছাত্র ছাত্রীকে সরকারী বৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ২২ কোটি বই, যা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে হয়নি।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সরকার। দেশব্যাপী রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কারের পাশাপাশি রাজধানীতে হাতিরঝিল, বনানী ফ্লাইওভার, কুড়িল-বিশ্বরোড ফ্লাইওভার, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের মত আধুনিক স্থাপনা তৈরী করেছে বর্তমান সরকার। পদ্মা সেতুর প্রাথমিক কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রও ইতোমধ্যেই আহবান করা হয়েছে। দেশীয় অর্থায়নেই এই সেতু তৈরি করা হবে।

“ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। ইউনিয়ন লেভেল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে ইন্টারনেট সেবা। সহজলভ্য হয়েছে মোবাইল ফোন। প্রযুক্তির এই উন্নয়নে ঘরে বসেই বিভিন্ন সেবা পাচ্ছেন দেশবাসী।

দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দূর করার কাজও করে যাচ্ছে সরকার। “হাওয়া ভবন” নামক অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে দেশ। ডেসটিনি, হলমার্কের মত দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বিগত জোট সরকারের আমলে এদেশ থেকে পাচার করা টাকা।

শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে সরকার। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এই সরকারের আমলে বিভিন্ন পর্যায়ে ৫৭২৩ টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনে ৬৩৯৪১ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। একটি নির্বাচনেও নূন্যতম দুর্নীতি বা কারচুপি হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন সংবিধানে উল্লেখিত নিয়মেই সামনের জাতীয় নির্বাচন হবে। তাঁর ভাষায়, “ সংবিধানে যেভাবে উল্লেখ আছে সেভাবেই সবকিছু হবে, এথেকে একচুল নড়া হবেনা ”।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংবাদকর্মীদের সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করার অনুরোধ জানিয়েছেন। দেশের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থেই এটা অপরিহার্য।

ডঃ মাকসুদুল আলম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশের জন্য উনার পিতা আত্মত্যাগ করেছেন। সেটাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উনি এবং উনার টীম নিরলস পরিশ্রম করে দেশের কপালে যে গৌরবের তিলক একে দিলেন সেটা জাতি আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

এ পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলনের দুটি বিশেষ ঘটনার দিকে আলোকপাত করতে চাই। ডঃ মাকসুদুল সাহেব বক্তব্য দেয়ার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে মাইক্রোফোন এগিয়ে দিয়েছেন। এই দৃশ্য দেখে আমি খুবই আনন্দিত। তিনি আবারও প্রমাণ করলেন জাতির পিতার যোগ্য কন্যাই হয়েছেন তিনি। এমন প্রধানমন্ত্রীই তো আমরা চাই। যিনি প্রতিনিয়ত জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে সেবা দিয়ে যাবেন তাদের।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছিলেন বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময়ের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে লোডশেডিং দেয়া দরকার। তাহলে মানুষের সেই দুঃশাসনের কথা মনে পড়বে। প্রশ্নোত্তর পর্বে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের খালেদ ভাই বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়া করে আমাদের লোডশেডিং দিবেন না। একটু একটু করে গত সরকারের সব দুর্ভোগ যদি আমাদের পেতে হয় তাহলেও দেশের মানুষের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে। ” নিঃসন্দেহে খালেদ ভাইয়ের এই বক্তব্যই বর্তমান সরকারের সফলতার সুস্পষ্ট নিদর্শন বহন করে।

এবার একটি ব্যাক্তিগত প্রত্যাশার কথা। আমি চাই দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রতিমাসে একবার করে এমন সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করবেন। সরকার দেশের জন্য কি কি করছে তা প্রধানমন্ত্রী নিজে আমাদের জানাবেন। তাহলেই দেশের মানুষ সরকারের কাজ সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানতে পারবে। এতে একদিকে যেমন সরকারের জবাবদিহিতা বাড়বে, সেইসাথে দূর হবে অনেক বিভ্রান্তি।

উন্নয়নের অঙ্গীকার, ধারাবাহিকতা দরকার
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

আবার আসিব ফিরে

আবার আসিব ফিরে ‘হাওয়া ভবন’ নামক নীড়ে- এই বাংলায়
হয়তো তারেক নয়- হয়তবা জঙ্গীবাদের ত্রাণকর্তার বেশে;
হয়তো গডফাদার হয়ে বাংলাস্তান নামক নব্য জঙ্গী দেশে
সন্ত্রাসীদের হাত ধরে একদিন আসিব ফিরে ক্ষমতার মায়ায়;
হয়তো চাঁদাবাজ হব- সব কাজের ভাগ আসিবে আমার পানে,
সারাদিন কেটে যাবে সেই কোটি কোটি টাকা গুনে গুনে;
আবার আসিব ফিরে বাংলার টাকা,ক্ষমতা,নারীর ভালবাসায়
ভাঙ্গা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জীর দামে কেনা এই বাংলায়;

হয়তো দেখিবে তুমি কিনিতেসি খাম্বা আমি টাকা মারার তরে;
হয়তো শুনিবে করিতেসি মিটিং বিদেশে বসে মাফিয়াদের সনে;
হয়তো ফুটিবে বোমা জঙ্গীবাদেরর নামে একসাথে সারাদেশ জুড়ে;
এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হবার পানে।
জাঁকিয়া বসিবে বাবর, মামুন, কোকো, ফালু সবাই আমায় ঘিরে
গর্দভ গোল্ডফিশ বাঙ্গালী; আমাকেই পাবে তোমরা ইহাদের ভীরে ।।

শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৩

রসাতলে গেল দেশ

সেদিন এক ইফতারে কথা হচ্ছিল। এর মধ্যে হঠাত কয়েকজনকে খুব সরব দেখা গেলো দেশের যা তা অবস্থা নিয়ে। ‘আরে দেখেন না, এই যে পদ্মা সেতুটা হইলো না শুধু দুর্নীতির কারনে। তারপর হলমার্ক, ডেষ্টিনি কেলেংকারী – সরকারের দুর্নীতিতে এক্কারে দেশটা সয়লাব হইয়া গেছে’।
নিজে কিছু বলতে যাব তার আগেই দেখি ওপাশ থেকে কে যেন একজন বলে ফেললো “ঐ মিয়া, পদ্মা সেতুতে কে দুর্নীতি করছে? আবুল? আবুলের বিরুদ্ধে একটা চার্জও এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক দাড়া করাইতে পারছে? ঐ হালারাতো লাভালিন-রে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করছে। কারন লাভালিন কোম্পানীর ব্যপারে তারা ক্লিয়ার। আর তুমি তোমার ডায়েরীর মইধ্যে আমার নাম লিখ্যা আমারে কইবা চোর, তাইলে তুমিতো হালায় আরো বড় চোর। কানাডায় মামলা চলতাছে (তোমাগো আন্তর্জাতিক মানের)। কই ঐ হালারাওতো এখনো কিছু কয় নাই। তোমরা এত্তো ফাল পাড়ো ক্যান?

হ, কইতে পারো যে সরকার পদ্মা সেতু করতে পারে নাই। এইডা মানি। তয় ক্যান পারে নাই হেইডাও জানি, মাগার কমু না। তোমাগে একজন নোবেল বিজয়ী আছে। ঐ হালারে দেখছো কোনদিন দেশের লাইগা কিছু করতে? হালায়তো নোবেল পাইবার পরের দিন থাইকা সারা দুনিয়ায় ঘুইরা ঘুইরা কইতাছে বাংলাদেশে ‘ডীপ সী পোর্ট’ লাগবো। আতা গাছে তোতা পাখীর মত এই বুলি তেনারে কে শিখাইলো? নোবেল পাইবার আগেতো তেনারে এগুলা বলতে শুনি নাই। আর এত্তো বড় অর্থনীতিবিদরে অর্থনীতিতে নোবেল না দিয়া শান্তিতে দিল ক্যান? উনিও এইডারে ছুইড়া ফালাইয়া দিল না ক্যান? অমর্ত্য সেনরে  কি শান্তিতে দিছে? নোবেল দিয়া আন্তর্জাতিক মানের দালাল বানাইছে। মর্নিং ব্রেকফাষ্ট কোঁড়া ছাড়াতো তেনারে কোন আন্তর্জাতিক কাম করতে দেখলাম না”।

উনি আরো বললেন “হলমার্ক আর ডেষ্টিনি কি এই সরকার বানাইছে নাকি? চুরি কি সরকার করছে? যে হালারা এই চুরির সাথে জড়িত তারাতো এখন বেশির ভাগই জেলে। বিচারতো হইতাছে। এগুলারে ফাঁসিতে দিব? তোমাগো আব্বা গোলাম আজম, নিজামী, মোল্লা, মুজাহিদ এগুলার লাইগাতো দেখি কাইন্দা বুক ভাসাইয়া ফালাও আর চোরগোরে শুলে চড়াইতে তোমগো এত্তো চিল্লাফাল্লা ক্যান ?

শ্যাষ কথা, দুর্নীতির কথা কইবার আগে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেইখ্যা নিছ। তোরা আমাগোরে ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান বানাইয়া পুরা দুনিয়ার মানুষের কাছে আমাগোরে ছোড করছস। এই সরকার আমাগোরে একবারও এত্তো বেইজ্জতি করে নাই। এখন আমরা দুর্নীতিতে ৪০ নম্বরে আছি। তোগোরে দেখছি আর এহনকারগুলারেও দেখতাছি। এক পোলা হইল কম্পিঊটার বিজ্ঞানী আর আরেক হালার পোলা হইল হাওয়া ভবনের মালিক। ওয়াক ত্থু! তোরা আবার কছ দুর্নীতির কথা! কচু গাছে ফাঁসি দিয়া মরছ না ক্যান তোরা”?

ভুতের মুখে রাম রাম

ইসলামী ঐক্যজোটের ইফতার মাহফিলে ম্যাঠাম জিয়া ওরফে গোলাপী বিবি বলেছেন, কোটা বাতিলের আন্দোলন নাকি যৌক্তিক এবং উনারা ক্ষমতায় গেলে কোটাপ্রথা বাদ দিয়ে বিভিন্ন পদে শুধু মেধাবীদেরই নিয়োগ দিবেন। তা ম্যাঠাম এই অধমের দুইটা কথা।
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আপনি গুলশানে যে আলিশান বাড়িটা পাইসিলেন দয়া কইরা সেইটা রাস্ট্ররে ফিরত দিয়া তারপর কথা কন। নিজে খাইবেন আর অন্যরা খাইতে গেলেই চোখ মারবেন এইডা কেমুনতর কথা?

আর ভবিষ্যতে যেহেতু শুধু মেধাবীদেরই নিয়োগ দিবেন বিভিন্ন পদে তাই আপনি এখনি রাজনীতি থাইকা সইরা যান, মেধাবীদের সুযোগ দিন। আট ক্লাস পাস দিয়া আর যাই হোক মেধাবী হওন যায় না। মূর্খ মানুষের মুখে মেধাবীদের গীত শুনতে কেমুন জানি লাগে। তয় আপনি গিয়া খাম্বা তারেকরে আবার আপনার জায়গায় বসায়েন না। কারন, তারেকের মত পুকুরচোরের থাইকা আপনার মত এইটপাশ শিক্ষিত দেশের জন্য কম ক্ষতিকর।

জামায়াতের সাথে আমাদের বন্ধন ফেবিকল দিয়া লাগানো, এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে - মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বৃহত্তর জামায়াতে ইসলামের বিএনপি শাখার নায়েবে আমীর মীর জাফর কুল বলেছেন, " আমরা কোন রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধ করাকে সমর্থন করি না। আমরা শুধুমাত্র নিষিদ্ধ হওয়া দলগুলোর বৈধতা দেয়াকে সমর্থন করি। এই কারণেই জিয়া সাহেব জামাত কে বৈধতা দিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসলে আমরা ফ্রিডম পার্টি, হরকাতুল জিহাদ, হিজবুত তাহরীর, জেএমবি সহ সব নিষিদ্ধ দলের বৈধতা দিব। সবাই মিইলা ভাগজুক কইরা এই দেশটারে লুটপাট কইরা খাইব। কেউ খাবে কেউ খাবেনা তা হবেনা তা হবেনা। "
আজ এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে মীর জাফর কুল এই বক্তব্য দিয়েছেন।
ফ্রিডম পার্টি, জেএমবি, হিজবুত তাহরির এর মত দলগুলোকে কেন বৈধতা দিবেন এ প্রশ্নের জবাবে নায়েবে আমীর বলেন, " হরকাতুল জিহাদের বেটারা ঘচু। গ্রেনেড মারিয়া ঠিকঠাক মতো মানুষ মারতে পারেন। তাই তাদের সহায়ক শক্তি হিসাবে এদের বৈধতা দেয়া হবে। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে কোন গ্রেনেডই টারগেট মিস করবে না। আওয়ামীলীগের নেতারা যেখানে গ্রেনেড যাবে সেখানে। "
আবেগঘন কন্ঠে মীর জাফর কুল বলেন," আমাদের উকিলে আমীর মওদুদ বলেছেন ঈদের পর দেশ অচল করে দেয়া। অতএব অবশ্যই দেশ অচল করা হবে। জামাতের সাথে আমাদের বন্ধন ফেবিকল দিয়া লাগানো। এ বাধন যাবেনা ছিঁড়ে। "
কিভাবে দেশ অচল করবেন এই প্রশ্নের জবাবে মৃদু খেসে মীর জাফরকুল বলেন " আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই দেখে, খালেদা জিয়া ফালুর সাথে হজ্বে গেলে তার ছবিও সবাই দেখে, সানি লিওনের পর্ণ বের হলেও তা সবাই দেখে। আমরা যখন দেশ অচল করব তখন আপনারাই দেখবেন কিভাবে করলাম। আর কিছু জানতে চাইয়েন না। কিছু কথা থাক না গুপন। "

জয়ের সাক্ষাৎকারঃ নতুন স্বপ্ন ও রাজনীতির দিকনির্দেশনা

গতকাল (পহেলা আগস্ট,২০১৩) রাত আটটায় একাত্তর টেলিভিশনের “একাত্তর সংযোগ” অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে। নানা কারনেই এই সাক্ষাৎকারটি ছিল বহুল আলোচিত। প্রথমবারের মত দেয়া পূর্ণ একটি সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় কি কি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তা জানার জন্য উৎসুক হয়ে ছিল সবাই। বলা যেতে পারে এই সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় রাজনীতির ময়দানে একজন পোড় খাওয়া খেলোয়াড়ের মতই সকলের প্রত্যাশা মেটাতে পেরেছেন। উপস্থাপিকা সামিয়া জামানের প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রাঞ্জল ভাষায়, অত্যন্ত সাবলীলভাবে। বর্তমানে রাজনীতির ময়দানে আলোচিত প্রায় সবগুলো বিষয়ই উঠে এসেছে এই সাক্ষাৎকারে। বিভিন্ন বিষয়ে আওয়ামীলীগের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি সজীব ওয়াজেদ জয় মার্জিত ভাষায় সমালোচনা করেছেন বিএনপি নের্তৃাত্বাধীন আঠারোদলীয় জোটেরও। দেশকে নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা বলেছেন তিনি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও জানিয়েছেন এই সাক্ষাৎকারে।

ঈষৎ পরিমার্জিত আকারে একাত্তর টেলিভিশনে দেয়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলঃ


সামিয়া জামানঃ আজকের একাত্তর সংযোগে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি সামিয়া জামান। আজকে আমরা এমন একজনের মুখোমুখি হচ্ছি যিনি এই মুহূর্তে সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ব্যাক্তিত্ব। আপনারা নিশ্চই বুঝতে পারছেন আমরা বলছি সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং তাঁর বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপদেষ্টা। সজীব ওয়াজেদ জয়, আপনাকে স্বাগত একাত্তর সংযোগ অনুষ্ঠানে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আপনাদেরকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে সুযোগ দেয়ার জন্য।
সামিয়া জামানঃ আপনাকে যে কারনে আমি আলোচিত বলেছি তা হল আপনি সম্প্রতি যুবলীগের একটি ইফতার পার্টিতে বলেছেন যে আপনার কাছে তথ্য আছে আগামীতে আওয়ামীলীগই আবার ক্ষমতায় আসবে। এটি ইতোমধ্যেই বহুল আলোচিত একটি মন্তব্য। বিরোধী দল এবং সরকার দল উভয়ই এর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে অনেক সময় ব্যয় করছেন। আপনি কি আমাদের বলবেন যে কি তথ্যের ভিত্তিতে আপনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ দেখুন সব রাজনৈতিক দলই জরিপ করে। আমরাও নিয়মিত জরিপ করি। আমরা সম্প্রতি দুটি জরিপ করেছি তাতে দেখা যাচ্ছে আওয়ামীলীগ বিএনপি থেকে এগিয়ে আছে। এটা বৈজ্ঞানিক উপায়ে করা এবং বাইরের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীকে দিয়ে করা হয়েছে। অবশ্য এটা নিয়ে বিরোধী দল নানা কথা বলছে, আমার কথাকে ঘুরানোর চেষ্টা করছে। নির্বাচনে কারচুপি করার তাদের যে অভ্যাস সেই অভিযোগ করছে আমাদের বিরুদ্ধে। তবে খেয়াল করে দেখেন আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে গত চার বছরে প্রায় ছয় হাজারটি নির্বাচন হয়েছে। কেউ কিন্তু কোন কারচুপির অভিযোগ তুলতে পারেনি কারণ আওয়ামীলীগ কখনো নির্বাচনে কারচুপি করেনা। আওয়ামীলীগ সবসময় মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষা করতে চেয়েছে। আওয়ামীলীগের কোন ইচ্ছাই নেই নির্বাচনে কারচুপি করার।
সামিয়া জামানঃ তারমানে তারা যে নীল নকশার নির্বাচনের কথা বলছে
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সামিয়া জামানঃ আপনি যে ছয় হাজার নির্বাচনের কথা বলছেন তার মাঝে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচন গুলোতে কিন্তু আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে। সামনের নির্বাচনের আগে অল্প সময়ে এই পরিস্থিতি কিভাবে বদলানোর পরিকল্পনা আছে ?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আসলে পরিস্থিতি পরিবর্তনের কিন্তু সেরকম প্রয়োজন নেই। পাঁচটি নির্বাচন হয়েছে সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে। এখানে জাতীয় ইস্যুর থেকে স্থানীয় ইস্যু গুলোই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। এছাড়াও কিছু কারণ আছে যার জন্য আমরা পরাজিত হয়েছি। এটা আমরা মেনেও নিয়েছি। আমরা যদি জাতীয় পর্যায়ে দেখি সেখানে কিন্তু আওয়ামীলীগ এগিয়ে আছে। এখানে ভোট গ্রহনের হার কিছুটা কম ছিল। জাতীয় নির্বাচনে যেখানে ৮০% এর মত ভোট প্রয়োগ হয় সেখানে এই নির্বাচন গুলোতে ৬০-৬৫% ভোট প্রয়োগ হয়েছে। তাছাড়া জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দেয়া নৌকা অথবা ধানের শীষ প্রতীকে। স্থানীয় নির্বাচনে কিন্তু তারা ভোট দেয় অন্যান্য প্রতীকে। নৌকার আলাদা একটা ব্র্যান্ড ইমেজ আছে। যারা নৌকার ভোটার তারা সবসময়য় নৌকাতেই ভোট দিবে।
সামিয়া জামানঃ আপনি বলছেন যে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় ইস্যুগুলোই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। নির্বাচনে পরবর্তী সময়ে অনেক পর্যবেক্ষকই কিন্তু বলেছেন যে এসব নির্বাচনে জাতীয় ইস্যুগুলোও বেশ ভালো ভূমিকা রেখেছে। এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে অপপ্রচার শব্দটি বহুল ব্যবহৃত হয়েছে। জাতীয় ইস্যুই হোক আর স্থানীয় ইস্যুই হোক, ঠিক কি ধরণের অপপ্রচার আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে হয়েছে বলে আপনি মনে করেন ?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আসলে অনেক গুলো ব্যাপারেই আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। হলমার্ক বলেন, ডেসটিনি বলেন, পদ্মা সেতু বলেন সবগুলো ব্যাপার নিয়েই আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা হচ্ছে।
সামিয়া জামানঃ এগুলো সবই কি অপপ্রচার, সরকারের সময়ে সংগঠিত দুর্নীতির খবর না?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ না, সরকার তো কোথাও দুর্নীতি করেনি। বরং আমরা দুর্নীতি থামিয়েছি, দুর্নীতির মোকাবেলা করেছি। দেখুন ডেসটিনি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানী। তখন থেকেই এতে দুর্নীতি হচ্ছে। বিএনপি আমলেও সেই দুর্নীতি হয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকারই খোঁজে বের করে সেই দুর্নীতি থামিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করেছি, বিএনপি কিন্তু করেনি। আপনি যদি অন্যান্য বিষয়গুলো দেখেন, যেমনঃ পদ্মা সেতু দুর্নীতি- এখানে কিন্তু কোন টাকা লেনদেন হয়নি। অভিযোগ করা হচ্ছে যে দুর্নীতির ইচ্ছা ছিল। আমরা তদন্ত করে যে তথ্য পেয়েছি, যাদের বিরুদ্ধে তথ্য পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
সামিয়া জামানঃ পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে আলোচিত ছিল আবুল হোসেনের নাম। তাঁর বিরুদ্ধে তো কোন মামলা দেয়া হয়নি।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ দেখুন উনার বিরুদ্ধে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আপনি যদি কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে চান তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ লাগবে। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে উনি টাকা চেয়েছেন অথবা উনার এধরণের কোন উদ্দেশ্য ছিল। এ সংক্রান্ত কোন তথ্য, চিঠি বা ই-মেইল কিছুই পাওয়া যায়নি। বলা হচ্ছে যে একটা ডায়েরীতে উনার নাম পাওয়া গিয়েছে। সেই ডায়েরী আজ পর্যন্ত কেউ চোখে দেখেনি। আদৌও এটা আছে কিনা সেটাও কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। তাছাড়া কানাডাতে পদ্মা সেতুর ব্যাপারে যে মামলা চলছে সেটাও আমরা নিয়মিত মনিটর করছি। সেখানে যারা সাক্ষ্য দিচ্ছেন তাদের কেউই কিন্তু আবুল হোসেনের নাম বলেননি। আসলে এটাও আমাদের বিরুদ্ধে একটি অপপ্রচার ছিল।
সামিয়া জামানঃ আপনাদের বিরুদ্ধে যে অপ্রচারগুলো অনেক বেশি কার্যকর হয়েছে তার মাঝে একটি হল গত ৫ই মে হেফাজতের সমাবেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং এতে নিহত মানুষের সংখ্যা। এই ধরণের অপপ্রচারগুলো আপনারা কিভাবে মোকাবেলা করবেন?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ সেদিন রাতে যে অপারেশন হয়েছে তাতে পুরোটা সময় আমরা মিডিয়াকে সাথে রেখেছি। তারা ভিডিও করেছে , ছবি তুলেছে। এই ভিডিও ও ছবি আমরা দেখেছি। যে ধরণের অপপ্রচার হচ্ছে তার কিছুই তখন হয়নি।
সামিয়া জামানঃ সেখানে একাত্তর টেলিভিশনও ছিল। কিন্তু যারা বিশ্বাস করছেন না বা করবেন না তাদের ব্যাপারে কি করবেন ?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ দেখুন এই ব্যাপারটা আমাদের ওভারকাম করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি মানুষ যখন বারবার সত্য ভিডিও গুলো দেখবে তখন তারাই বুঝতে পারবে যে সেখানে কোন হত্যা হয়নি। গুজব রটনাকারীরা হাইতির গণহত্যার ছবিকে ৫ই মের ছবি বলছে। জর্জটাউনে একটি গণ আত্মহত্যা হয়েছিল সেই ছবিকেও তারা ৫ই মের ছবি বলছে। আওয়ামীলীগ এতদিন তৃণমূল পর্যায়ে কোন প্রচারণা চালায়নি। আওয়ামীলীগ এতদিন দেশের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা এতদিন দেশের উন্নয়নের কাজেই নিবেদিত ছিল। এই সরকারের আমলে যে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে তা কিন্তু এমনি এমনি হয়নি। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার ফলেই এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে। বিরোধী দলে থাকলে একটা সুবিধা হচ্ছে ইচ্চামত মিথ্যাচার করা যায়। উনাদের তো আর কোন কাজ নেই। উনারা দেশের কোন কাজ করছেন না, সংসদে আসছেন না।
সামিয়া জামানঃ এটা কি আপনারা যখন বিরোধী দলে থাকেন তখনকার জন্যও প্রযোজ্য?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ না তা ঠিক নয়। আমরা সংসদে গিয়েছি। আমরা জনস্বার্থে অনেকগুলো বিলের এমেন্ডমেন্ট এনেছি। কিন্তু একটি এমেন্ডমেন্টও তারা মানেনি। 
সামিয়া জামানঃ আপনি তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারণার কথা বলছেন। বলছেন যে আওয়ামীলীগ উন্নয়ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সেকাজ ঠিকভাবে করতে পারেনি। তাহলে আপনি কি এই ব্যাপারে কাজ করতে যাচ্ছেন?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ হ্যাঁ, এই ব্যপারে আমার কাজ করার ইচ্ছা আছে। যেহেতু এই ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা আছে। তাছাড়া আমি  বিদেশে থাকি, অনেক অনলাইন এবং মাস কেম্পেইন আমি খুব কাছে থেকে দেখছি। আওয়ামীলীগের যে মনোবল আছে যে, যেসব অনুসারী আছেন এবং নৌকার যে ব্র্যান্ড ভ্যালু আছে সেই সবকিছু নিয়ে আমরা এখনো মাঠে নামিনি। ঐক্যবদ্ধ ভাবে আওয়ামীলীগ যদি মাঠে নামে তখন তাদের হারানো খুবই কঠিন কাজ।
সামিয়া জামানঃ আপনি কি দলের মাঝে কোন অনৈক্যের আভাস পাচ্ছেন ? বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামীলীগের যে সমস্যাগুলো হচ্ছে তাতে কি অনৈক্যের ভূমিকা রয়েছে?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ দেখুন বড় দলে এরকম মাঝে মাঝে হয়। তাছাড়া সরকারের মন্ত্রী এম্পিরা অনেকেই সরকারি কাজে অনেক ব্যস্ত থাকেন। অনেক সময়ই তাদের পক্ষে মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের সাথে সেভাবে যোগাযোগ রাখা হয়ে উঠে না। কিন্তু এসব সমস্যা দূর করার যথেষ্ট সময় আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়েও মাঠে নামব এবং তখন আমাদের হারানো আসলেই কঠিন হবে।
সামিয়া জামানঃ আপনি নির্বাচনের কথা বলছেন। গত বারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ইশতেহার একটি সফল ইশতেহার ছিল। বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং দিন বদলের প্রতিশ্রুতি তরুণ ভোটারদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। সেই ইশতেহার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ কতটুকু সফল হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমাদের ইশতেহারে যতগুলি প্রতিশ্রুতি ছিল তার বেশিরভাগই আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। আমাদের প্রথম ওয়াদাই ছিল আমরা বিদ্যুতের সমস্যা দূর করব। আমার মনে আছে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল যে দেশের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের পথে যাচ্ছিল। তাই দ্রুতই সেই সমস্যা দূর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। 
সামিয়া জামানঃ কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যে কুইক রেন্টাল পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে সে ব্যাপারেও তো অনেক সমালোচনা হয়েছে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ দেখুন উন্নয়ন কাজে ভর্তুকি দেয়া কখনো দুর্নীতি হতে পারেনা। ভর্তুকি তো আমরা বিভিন্ন খাতে দেই, জনগণের স্বার্থেই দিতে হয়। সেই কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট গুলোতে উৎপাদিত বিদ্যুতে কারণেই দেশের অর্থনীতি অনেক এগিয়ে গিয়েছে। একটা প্রাইমারী পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করতে কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগে। আমরা যদি তিন বছরের জন্য বসে থাকতাম তাহলে কল কারখানা গুলোতে উৎপাদন বাড়ত না। দেশের অর্থনীতি গতিশীল হত না। মানুষের আয় বাড়ত না। কুইক রেন্টাল দেয়া ছাড়া আমাদের অন্য কোন উপায় ছিল না।
সামিয়া জামানঃ তারমানে আপনি বলছেন বিদ্যুতে ক্ষেত্রে সরকার সফলতার দাবি করতে পারে। আর কোন কোন ক্ষেত্রে সফলতা রয়েছে?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা সফল। তারপর আপনারা শিক্ষাক্ষেত্রে দেখুন। আমরা কোটি কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। এটা বাংলাদেশ কেন বিশ্বের কোন দেশই পারেনি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেখুন, শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই এই সরকারের আমলেই পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যা আগে কোন সরকার করতে পারেনি। আমরা এক এক করে দেশের সব সমস্যার সমাধান করছি। বিদ্যুৎ সমস্যাটা ছিল দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। আমরা সেটা দূর করেছি। আমরা দুর্নীতি দূর করার জন্য কাজ করেছি। বাংলাদেশে দুর্নীতি আমরা কমিয়েছি। আপনারা যদি গত সরকারের সাথে তুলনা করেন তাহলে দেখতে পাবেন দুর্নীতিতে আমরা তখন কোথায় ছিলাম আর এখন কোথায় আছি। বিএনপি আমলে ভয়াবহ রকমের দুর্নীতি হয়েছে। আমরা সেটা কমিয়েছি।    
সামিয়া জামানঃ আপনার কি মনে হয় বিএনপি সরকারের আমলের দুর্নীতির কথা মানুষের এখনও মনে আছে?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ সেটা হয়ত পুরোপুরি মনে নেই সবার। একারণেই বিএনপি এখনও আশাবাদী আছে যে মানুষ তাদের দুঃশাসনের কথা ভুলে গিয়েছে। দেখুন তারা আমাদের আগে ক্ষমতায় ছিল। তারা এখন বলছে যে আবার ক্ষমতায় গেলে তারা নতুন ধারার কাজ করবে। অথচ তাদের নের্তৃত্বে কিন্তু কোন পরিবর্তন আসেনি। তাদের আমলে যারা দুর্নীতি করেছিল এখনও তারাই তাদের দলের শীর্ষ পর্যায়ে আছে। আপনারা দেখেন, তাদের শাসন আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ান হয়েছিল। এমন কোন সেক্টর ছিল না যেখানে তারা দুর্নীতি করেনি। তাদের দুর্নীতির কারণে কোন ধরণের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। বিদ্যুৎ খাতে তারা এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উতপাদনও বাড়াতে পারেনি শুধুমাত্র তাদের দুর্নীতির কারণে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে নিজেই হাওয়া ভবন খোলে দুর্নীতি করেছে। সিএনজি প্রকল্প থেকে সেখানে টাকা যেত, খাম্বা লিমিটেড তৈরি করে দেশব্যাপী খাম্বা সরবরাহের নামে সেখানে টাকা যেত। এমন কোন ব্যাবসায়ী নাই যাকে হাওয়া ভবনে ডেকে নিয়ে গিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়নি। তার সাথে তুলনা করতে তো কোন সমস্যা নেই। তুলনা তো করতেই হবে। মানুষ ভোট দিবেই আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির মাঝে তুলনা করে। আমরা চাই এই তুলনাটা হোক। ঠিক ভাবে এই তুলনাটা হোক বিএনপির পাঁচ বছরে তারা কি করেছে আর আওয়ামীলীগের পাঁচ বছরে আমরা কি করেছি? আমাদের সময়ে কোন ভবন খোলা হয়নি যেখান থেকে চাঁদাবাজি করা হয়েছে। আমরা সরকারীভাবে মালয়েশিয়ার লোক পাঠাচ্ছি, এখানে যেকোন ধরণের চাঁদাবাজির সুযোগ আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। নিয়মিত হজ্ব ফ্লাইট যাচ্ছে, সেখানে কোন চাঁদাবাজি হচ্ছে না। বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ীও বলতে পারবেন না যে জয়কে চাঁদা দিতে হয়েছে অথবা জয় আমার কাছে চাঁদা দাবি করেছে।
সামিয়া জামানঃ জয় বনাম তারেক এটা নিয়ে অনেক খবর প্রচারিত হচ্ছে প্রতিদিন। আপনি যেহেতু তারেকের দুর্নীতির কথা বলছেন, হাওয়া ভবনের কথা বলছেন তাই আপনাকে কেন্দ্র করে একটি বিকল্প ক্ষমতার বলয় গড়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে। এই আশঙ্কা কি সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ সেটার প্রমাণ তো অলরেডি পেয়েই গেছেন আপনারা। আওয়ামীলীগ তো সাড়ে চার বছর ক্ষমতায় ছিল। এই সময়ে আমি কি এমন কিছু করেছি? আমার মা দুইবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তারেক রহমানের মাও দুইবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমি কি করেছি আর তারেক রহমান কি করেছে আপনারা তা ভালো করেই জানেন। যা আমি বারবার বলে এসেছি, আমাদের পরিবারের সবাই শিক্ষার উপর জোড় দিয়েছে। আমাদের দেশের টাকা, দেশের সম্পদ মেড়ে খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা ভালো আছি। বিএনপির ক্ষেত্রে দেখেন তাদের আমলে তারা কি করেছে? এটাই তো প্রমাণ।
সামিয়া জামানঃ সাম্প্রতিক সময়ে আপনি বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে যাচ্ছেন, রাজনীতি নিয়ে কথা বলছেন। এটা ঠিক কোন প্রেক্ষাপটে করছেন? আপনি কি রাজনীতিতে আসছেন?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন প্রচারণা চালানোর সময়। আমি এসেছি আমার দলকে সহায়তা করতে। আমার নিজের পক্ষে যতটুকু সম্ভব সেটা আমাকে করতেই হবে। আমি ক্ষমতা বা টাকার দিকে নজর দিতে আসিনি। সেটা যদি হত তাহলে আমি তো সাড়ে চার বছর আগেই আসতে পারতাম। তা আমি করিনি। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের মানুষকে আমার কথাটা জানানো। এই যে আপনি আমার সাথে কথা বলছেন, এই সুযোগটা কিন্তু সবাই পায়না। আমার ফেসবুকের একটি ছবি চার পাঁচ লক্ষ মানুষ দেখেছে দুইদিনে। এই সুযোগটাই আমি কাজে লাগাতে চাই।

সামিয়া জামানঃ হ্যাঁ সেই ছবিটা আমরা সবাই দেখছি। আপনি আপনার জন্মদিনের দিন একটি ফেসবুক পেজ খুলেছেন এবং পারিবারিক আবহের একটি ছবি দিয়েছেন যেখানে দেখা যাচ্ছে আপনার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার জন্য রান্না করছেন। এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কি আপনি সবার সাথে যোগাযোগ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন অথবা এই ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে চাচ্ছেন?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ এই দিকটায় অবশ্যই নজর দিচ্ছি। কারণ বার্তা পৌছানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, বিশেষ করে তরুণদের কাছে। এই দিকটা আমি অবশ্যই খেয়াল রাখব। তাছাড়া অন্যান্য যেসব মাধ্যম রয়েছে সেগুলোও ব্যাবহার করব।
সামিয়া জামানঃ আপনি কি আনন্দিত যে এত অল্প সময়ে এত বিপুল পরিমাণ মানুষ আপনার পেজ দেখেছে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমি আসলেই আনন্দিত। আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে অল্প সময়ে এত বিপুল সাড়া পাব। আমি একজন মডারেটরও ঠিক করেছি যে এখন থেকে আমার পোস্টগুলো ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দিবে। আমরা দলের পক্ষ থেকেও সোশ্যাল মিডিয়া তে অনেক একটিভ হব।  
সামিয়া জামানঃ আগে থেকেই আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী অনলাইনে বেশ একটিভ ছিলেন। তারপরও  একটা দীর্ঘ সময় ইউটিউব বন্ধ ছিল। সেইসাথে ফেসবুকে লিখালিখি ব্যাপারেও অতিরিক্ত নজরদারির একটা অভিযোগ আছে। এই ব্যাপারে তরুণ সমাজের একটা ক্ষোভও রয়েছে। এই বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ এটা কিন্তু আমরা সরাসরি ব্লক করতে চাইনি। এব্যাপার গুলো নিয়ে বিটিআরসি বারবার ইউটিউব ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে। আপনারা জানেন আমেরিকায় তৈরী ইসলাম ধর্মের প্রতি উস্কানীমূলক ভিডিওচিত্রের প্রচারের কারণে মুসলিম দেশগুলোতে বেশ ভায়োলেন্স চলেছে। এই ঘটনা বাংলাদেশে যেন না হয় সেকারনে এই ভিডিও সরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা ইউটিউবে যোগাযোগ করেছি। একই ভাবে ফেসবুকে ধর্মকে অবমাননা করে যখন কিছু পোস্ট দেয়া হয়েছে তখন সেগুলো সরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা ঠিকভাবে কো অপারেট না করার কারণেই আমাদের পুরো সাইটটা ব্লক করতে হয়েছে। তারপর ফেসবুক এবং ইউটিউব কর্তৃপক্ষ যখন আমাদের কো অপারেট করতে শুরু করল তখন কিন্তু আমরা ব্লক উঠিয়ে নিয়েছে। এগুলো ব্লক করে রাখার ইচ্ছা কখনোই আমাদের ছিলনা।
সামিয়া জামানঃ উত্তরাধিকার রাজনীতিতে একটি বিশেষ সুযোগ যেটি আপনি নিজেও স্বীকার করলেন যে অন্য যে কারোর তুলনায় আপনার কথা শুনতেই আমরা বেশি আগ্রহী। এই বিষয়টিকে সাধারণত নেগেটিভলিই দেখা হয়।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আসলে এটা ডিপেন্ড করে সম্পূর্ণ ভাবে মেধার উপর, যোগ্যতার উপর। আমি কার ছেলে সেটা বড় কথা নয়। আমি প্রথমেই বলে নেই যে, রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে আমার তেমন আগ্রহ কখনোই ছিল না। আমি বাধ্য হয়েই আসি যখন আমার মায়ের উপর ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়, আমাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সাহেবের স্ত্রীসহ আরও অনেককে হত্যা করা হয়। তখন আমার মাঝে একটা জেদ চেপেছিল যে বিএনপির মত ভয়ংকর একটা দলের হাত থেকে আমি আমার দেশকে রক্ষা করব, আমার দলকে রক্ষা করব। এখনও আমি এসেছি শুধুমাত্র আমার দলকে সহযোগিতা করতে। আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে ছয় মাস যথেষ্ট সময় কিনা? আমি বলব ছয় মাসই যথেষ্ট সময়। আমার এখনকার চিন্তা হল সামনের নির্বাচনে আমার দলকে জিতাতে হবে। আমাদের দলের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করা হয়েছে সেটা আমি মোকাবেলা করতে চাই। সেটা করতেই আমি এসেছি এবং আমি বিশ্বাস করি এটা আমি করতে পারব। উত্তরাধিকারের কথা যদি বলেন সেখানেও যোগ্যতার ব্যাপার রয়েছে। আপনারা দেখেন ডাক্তারের ছেলে অনেক সময়ই ডাক্তার হয়, আইনজীবীর ছেলেও সাধারণত আইনজীবীই হয়। আমরা যারা রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছি তারা রাজনৈতিক বিষয় গুলো খুব কাছে থেকে দেখেছি। আমি তো ১৯৮২ সাল থেকে দেখছি। কিভাবে গণতন্ত্র আরম্ভ হল, নির্বাচন হল, সরকারে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কিভাবে নেয়া হয় সেগুলো দেখেছি। আমি বলব আমরা যারা রাজনৈতিক পরিবারে বড় হয়েছি তাদের রাজনীতির উপর একটা ইন্টার্নশিপ হয়েছে। এই সুযোগ কিন্তু বেশিরভাগ মানুষেরই নেই। তারপরও শেষ পর্যন্ত সবকিছু নির্ভর করে মেধার উপর। সবাই পারেনা। সবার সেই সামর্থ্য নেই। যাদের চরিত্রে স্বচ্ছতা আছে তারা সৎ কাজ করবে। যাদের চরিত্রে দুর্নীতি আছে তারা সবসময় দুর্নীতিই করবে। মানুষ চরিত্র বদলাতে পারেনা।
সামিয়া জামানঃ আপনি রাজনীতিতে ব্যক্তি চরিত্রের প্রভাবের কথা বলছেন। সেই সাথে নির্বাচনকালীন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে জনগণের সামনে নিজেদের উপস্থাপন করে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। আপনারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে দিন বদলের কথা বলেছিলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলেন এবং সেটি ব্যাপকভাবে গৃহীতও হয়েছিল। বিএনপি এরই মাঝে নতুন ধারার রাজনীতি নামক একটি শ্লোগান নিয়ে তাদের কাজ শুরু করেছে। আপনাদের শ্লোগান এবার কি হবে?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমাদের শ্লোগান এখনও ফাইনাল হয়নি। আমাদের মেইন থীমটা হবে যে আমরা অনেক এগিয়ে এসেছি, আমরা এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে চাই। আমরা পিছিয়ে যেতে চাইনা। গত বিএনপি সরকারের আমলে দেশের অবস্থা যা ছিল সেই অবস্থায় আমরা আর ফিরে যেতে চাইনা। তখন অবিশ্বাস্য রকমের দুর্নীতি হয়েছে, সন্ত্রাস হয়েছে, দেশব্যাপী জঙ্গি হামলা হয়েছে, সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা নিজেই দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান করেছে সন্ত্রাসীদের জন্য, আমার মাকে হত্যার উদ্দেশ্যে যে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল তাতে তখনকার প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তারেক রহমান নিজেই জড়িত ছিলেন বলে মুফতি হান্নান সাক্ষ্য দিয়েছে। আমরা এইরকম পরিস্থিতিতে আর ফিরে যেতে চাইনা। আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এটা ঠিক আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, তুলনা করে দেখেন আমরা কোথা থেকে কোথায় এসেছি। দেশের সব সমস্যা দূর করতে, দেশকে আধুনিক একটা দেশে পরিণত করতে আমাদের সময় লাগবে। আমরা পাঁচবছরে অনেক দূর এগিয়ে এসেছি এবং এভাবেই এগিয়ে যেতে চাই। আমরা অন্ধকারে ফিরে যেতে চাইনা।
সামিয়া জামানঃ আওয়ামীলীগ যে সফলতা গুলো দাবি করে তার মাঝে অন্যতম হল যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যা এখন চলছে। এই বিচারের রায় এবং তা কার্যকর হওয়া না হওয়া- সামনের নির্বাচনে সামনের নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব রাখবে বলে আপনি মনে করেন?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমি মনে করি এটার একটা মারাত্মক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশের মানুষ ৪২ বছর অপেক্ষা করেছে এই বিচারের জন্য। আমরা চেয়েছি যে বিচার নিয়ে কারও মনে যেন কোন সন্দেহ না থাকে। তাই আমরা সময় নিয়ে স্বচ্ছতার সাথে এই বিচার করছি। আইনগত ভাবে সবকিছু করতে কিছুটা সময় লাগে। সেভাবেই আমরা করছি। আমাদের যা ওয়াদা ছিল সেটা আমরা পূরণ করছি, সম্পূর্ণ পূরণ করার ইচ্ছা আছে।
সামিয়া জামানঃ এই বিচার নিয়েও কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে অনেক আলোচনা হয়েছে। অনেক বড় ধরণের প্রচারণার চালানোর চেষ্টাও করা হয়েছে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ দেখুন আমাদের এই বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে কোন দেশ এখন পর্যন্ত প্রশ্ন তোলতে পারেনি, কেউ বলতে পারেনি এখানে ফ্রী এন্ড ফেয়ার বিচার হচ্ছে না। অনেকেই এখানে এসে বিচারের প্রক্রিয়া দেখে গিয়েছেন এবং সবাই এটা নিয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় যে আমাদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের সাথে হাত মিলিয় বিদেশে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে তাদের পক্ষে লবিং করিয়েছে। যারা আমাদের দেশের মানুষকে হত্যা করেছে, নিজেদের ভাইবোনকে হত্যা করেছে, নিজেদের মা-বোনকে ধর্ষণ করেছে তাদের পক্ষ নিয়ে বিএনপি তাদের সুরে কথা বলছে। একজন আওয়ামীলীগ কর্মী হিসেবে না, বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এটা আমার কাছে আশ্চর্য জনক মনে হয়। এটা তো জাতীয় ইস্যু। যারা আমাদের দেশের বিরোধিতা করছে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের পক্ষে কথা বলা তো রাষ্ট্রের বিরোধীতা করারই সামিল। দেশের প্রতি তো তাদের কোন ভালোবাসা দেখছি না। একমাত্র আওয়ামীলীগ সরকারই এই বিচারটা করছে। বিএনপি কি করেছে ? তারা এই যুদ্ধাপরাধীদের কে দেশে ফিরিয়ে এনেছে, তাদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়ে তাদের মন্ত্রী বানিয়েছে। এটা আমার কল্পনা করতেও কস্ট হয়, কিভাবে এটা তারা করতে পারল?
সামিয়া জামানঃ যুদ্ধাপরাধের মত একটা জাতীয় ইস্যুতেও সরকার দল ও বিরোধীদল একমত হতে পারছে না।  যে নির্বাচন নিয়ে এত কথা হচ্ছে সেই নির্বাচনের ব্যাপারেও তো দুই পক্ষ দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার- ঠিক কোন সরকারের অধীনে সামনের নির্বাচন হবে বলে আপনি মনে করছেন ?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে, সেটা কোন সরকারের অধীনেই হবেনা। আমরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছি, শক্তিশালী করে দিয়েছি। বিশ্বের সব দেশেই নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন পরিচালনা করে। কথা হচ্ছে সেসময় দেশ কোন সরকার চালাবে। আমরা বিরোধী দলকে প্রস্তাব করেছি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার জন্য। কারণ উচ্চ আদালতে রায়ের পর অনির্বাচিত কাউকে ক্ষমতা দেয়ার সুযোগই নেই। আমাদের সংবিধানেই আছে ‘বাংলাদেশ ইজ এ ডেমোক্রেট রিপাবলিক পার্টি গোভর্নড বাই ইলেকটেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অব পিপল।’ এখানে অনির্বাচিত কারও হাতে ক্ষমতা দেয়া অসাংবিধানিক। তাছাড়া অনির্বাচিত সরকারের অভিজ্ঞতাও তো আমাদের আছে। আমরা দেখেছি গত দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কি হয়েছে। বিএনপি পরবর্তী তত্তআবধায়ক সরকারের আমলেই কি একটি অবাধ নির্বাচন হতে যাচ্ছিল ? ২০০৬ সালে বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ সাতটি ধাপ অতিক্রম করে নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপির তৈরী করা ১ কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার সহ ভোটার তালিকা দিয়ে সাজানো নির্বাচন করতে যাচ্ছিল। তাহলে তত্ত্বাবধায়ক দিয়ে লাভটা কি হল? বরং এই সুযোগ টা নিল সামরিক শক্তি। ক্ষমতা দখল করে দুইবছর দেশ শাসন করল। সব রাজনীতিবিদদের জেলে ঢুকালো, নির্যাতন করল।
সামিয়া জামানঃ কিন্তু আওয়ামীলীগ তো সামরিক সহায়ত পুষ্ট সেই তত্তাবধায়ক সরকারকে প্রথমে সাধুবাদ জানিয়েছিল। তাদের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানেও গিয়েছিল।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমরা গিয়েছিলাম কারণ আমরা আশা করেছিলাম যে তারা সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মাঝেই নির্বাচন দিবে। তারা তো সেটা করেনি। তারা দুই বছর থেকেছে। এটাই তো আমাদের ভয়। এখন আমরা যদি একটা অনির্বাচিত সরকার আনি এবং তারা যদি ৯০ দিনের কথা বলে ১০ বছর থাকে তখন আমরা কি করব ?
সামিয়া জামানঃ এই ধরণের আশঙ্কার কথা প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বলেছেন। কিন্তু এর পরিবর্তে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিকল্প অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রুপরেখা নিয়ে আওয়ামীলীগ কি বিএনপির সাথে  কার্যকর কোন আলোচনা করছে নাকি দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় আছে?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমরা তো দেখতে পাচ্ছি যে বিএনপিই অনড় হয়ে বসে আছে। আমরা যখনই যে প্রস্তাব দিচ্ছি তারা সেটাই প্রত্যাখ্যান করছে। তারা চাচ্ছেই রাজপথে আন্দোলন করতে, ভাংচুর করতে। এটা ছাড়া তারা সন্তুষ্ট হবেনা। এখন আমাদের বিশ্বাস আমরা যাই প্রস্তাব করি তারা তা মানবে না। আমাদের কথা হচ্ছে আমাদের সময়ে যে ছয় হাজারের মত নির্বাচন হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে বিএনপিও বলতে পারবে না যে কারচুপি হয়েছে বা সরকার নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। সবাই এর প্রশংসা করেছে। আমার মনে হয় বিএনপিই মানুষের মাঝে এব্যাপারে একটা ভয় বা আতংক তৈরী করার চেষ্টা করছে। শেষ পর্যন্ত তারা ঠিকই নির্বাচনে যাবে। এর আগেও বিভিন্ন সময় তারা নির্বাচনে যাবে না বলে পরবর্তীতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
সামিয়া জামানঃ বিএনপি স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচনের পার্থক্যের কথা বলছে। একই সাথে ৩০০ টি আসনের নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মিডিয়ার উপস্থিতি ছাড়াও অন্যান্য অনুঘটক যা নির্বাচনকে অবাধ করতে সহায়তা করে সেগুলো নিশ্চিত করা সম্ভব না বলে মনে করছে বিরোধী দল। এটি শুধু বিরোধী দল নয়, সুশীল সমাজের একটি অংশও কিন্তু এটাই মনে করছে। এই ব্যাপারে আপনি কি বলবেন ?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সেটা স্থানীয়ই হোক আর জাতীয় নির্বাচনই হোক তেমন কোন পার্থক্য নেই। এটা সম্পূর্ণ রুপে নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনের উপর। এখানেও আবার সেই চরিত্রের কথাই ফিরে আসে। বিএনপি সবসময়ই নির্বাচনে কারচুপি করে অভ্যস্ত। হ্যাঁ, বিএনপির অধীনে কোন অবাধ নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। ৯৬ এর নির্বাচনে তারা কারচুপি করেছে। মাগুরার উপনির্বাচনে কারচুপি করেছে, ঢাক-১০ আসনের উপনির্বাচনে কারচুপি করেছে, ২০০৬ সালের নির্বাচনের ভোটার তালিকায় তারা ১ কোটি ৪০ লক্ষ ভূয়া ভোটার এর নাম ঢুকিয়ে সাজানো নির্বাচন করতে চেয়েছে। আওয়ামীলীগের কিন্তু সেই চরিত্র নেই। আওয়ামীলীগ কখনো নির্বাচনে কারচুপি করেনি। কোনদিন করেনি। আওয়ামীলীগ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার এর জন্য লড়াই করেছে, সেটা আদায় করেছে। এটা আওয়ামীলীগের চরিত্র। আর সুশীল সমাজের অনেকে হয়ত ভেবেছে আরেকবার তত্ত্বাবধায়ক আসলে হয়ত তারাই অনেকদিন দেশ চালাবে। ‘গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল কন্সেসেস’ মত কিছু একটা করে নিজেরা ক্ষমতায় বসবে।
সামিয়া জামানঃ সেই আভাস তো এখনও আছে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধান দুই জোট যদি সমঝোতায় না আসতে পারে তাহলে সেই আশঙ্কা তো থেকেই যায়।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ এখানেই তো ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সুশীল সমাজের একটা অংশ হয়ত চাচ্ছেই অনির্বাচিত দের হাতে ক্ষমতা যাক এবং তাহলেই হয়ত তারা ১/১১ এর মত একটা পরিস্থিতি তৈরি করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে। তখন দেশের কি অবস্থা হবে? এটাই আমাদের ভয়।
সামিয়া জামানঃ আমরা এবার সামনের দিকে দৃষ্টি দেই। আমাদের অনুষ্ঠানও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবার তরুণ ভোটারদের সংখ্যা আরও বেড়েছে। আপনি তাদের জন্য কি ধরণের নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন ?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমরা একটা ভিশন দিয়েছি, ভিশন ২০২১। বিগত সাড়ে চার বছরে আমরা সেই ভিশনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ অর্জন করেছি। কাজ অনেক হয়েছে এবং আরও কাজ বাকি আছে। আমরা উন্নতির এই ধারা ধরে রাখতে চাই। আমরা যখন ক্ষমতা গ্রহন করি তখন মাথাপিছু আয় ছিল ৬০০ মার্কিন ডলার, বিগত সাড়ে চার বছরে সেটা বেড়ে প্রায় ১০০০ ডলার হয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশ হবে একটি দারিদ্র্য মুক্ত দেশ। বিগত সাড়ে চার বছরে দারিদ্রের হার দশ শতাংশ কমেছে। মানে প্রায় দেড় কোটি মানুষ দারিদ্র্য মুক্ত হয়েছে এই সময়ে। এই সরকারের শাসনামলে আমরা যে পরিমাণ কাজ করেছি তা যদি পরবর্তী ৫-১০ বছর করা যায় তাহলে আমরা দেশের চেহারা পাল্টে দিতে পারব, বাংলাদেশ হবে একটি আধুনিক দেশ। আমরা ইতোমধ্যেই দেশের চেহারা অনেক পরিবর্তন করেছি। আপনি হাতির ঝিল দেখেন, ঢাকা শহরের ফ্লাইওভার গুলো দেখেন সবই উন্নত দেশের মত করে তৈরী করা হয়েছে। আমাদের নতুন ট্রেন দেখেন, নতুন বিমানগুলো দেখেন। আমরা নতুন পোর্ট করছি, নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, নতুন নতুন কল কারখানা হচ্ছে। একটি আধুনিক দেশ গড়ে তোলাই আমাদের একমাত্র স্বপ্ন। আমার বিশ্বাস শুধুমাত্র আওয়ামীলীগই এটা করতে পারবে, আর কেঊ পারবে না।
সামিয়া জামানঃ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি বলে আপনি মনে করেন?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দারিদ্র্যতা। আওয়ামীলীগ যখন সরকার গঠন করে তখন সাড়ে চারকোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে ছিল। আমরা সেটা কমিয়ে তিন কোটিতে নামিয়ে এনেছি। আমরা যখন দারিদ্র্য দূর করতে পারব, যখন মানুষের ইনকাম বাড়বে তখন কিন্তু তারা এদেশের ইকোনমিতেই খরচ করবে। ফলে ইকোনমি হয়ে উঠবে কনজ্যুমার ড্রিভেন ইকোনমি। উন্নয়নের জন্য এটা দরকার। যেহেতু আমাদের লোকসংখ্যার অভাব নেই। তাই সবার ইনকাম বাড়লে আমাদের ইকোনমির গ্রোথ অনেক দ্রুততর হবে। তাতে আমরা সবাই লাভবান হব।     
সামিয়া জামানঃ দারিদ্র্য বিমোচন তো একটি দীর্ঘ মেয়াদী কাজ কিন্তু ইমিডিয়েট সামনের কিছু ব্যাপার আছে যেমন হেফাজতের অতি ধর্মীয় রক্ষনশীলতার তের দফা, মানবতাবিরোধীদের শাস্তির রায় কার্যকর ইত্যাদি। এর মাঝে কোনটিকে আপনি দেশের জন্য বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছে?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ ধর্ম নিয়ে আমাদের ব্যাপারে যে অপপ্রচার চলছে সেটা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আওয়ামীলীগ বাঙ্গালী মানুষের জন্য আছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান ,আমরাও মুসলমান। কিন্তু আমাদের হিন্দু ভাইয়েরাও আছেন, খ্রিস্টান ভাইয়েরা আছেন, বৌদ্ধ ভাইয়েরা আছেন। তাদেরকে তো আমরা বাদ দিতে পারিনা। আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে বাঙ্গালী জাতির জন্য কাজ করতে চাই। আমরা ধর্মের জন্য কাউকে বাদ দিতে চাইনা। তবে আমাদের যারা বিরোধী তারা আমাদের নামে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ ব্যাপারগুলোই এখন সবাইকে বোঝাতে হবে, বাস্তব কথাগুলো তাদের জানাতে হবে। আমার মা অত্যন্ত ধার্মিক একজন মানুষ। তিনি প্রতিদিন ভোরবেলা উঠে ফজরের নাম পড়েন, চা খান, তারপর কোরআন শরীফ পাঠ করেন। আমার মা এটা প্রতিদিন করেন, পৃথিবীর যে দেশেই থাকুন না কেন। আর এর বিপরীতে আমরা যদি বিরোধীদলীয় নেত্রীকে দেখি উনাকে যখন ক্যান্টনমেন্ট এর বাসা ছাড়তে হল তখন সেই বাসার অনেক কিছুই আমরা টিভিতে দেখেছি। আমি বাংলাদেশের মানুষেরদের বলব, আপনারাই বিচার করুন কারা ধার্মিক আর কারা নাস্তিক। মিথ্যা কথা চাইলেই বলা যায়, অপপ্রচার চাইলেই করা যায়। আপনারাই বিচার করে দেখেন কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।
সামিয়া জামানঃ  বিশেষ যে ভৌগলিক অবস্থানে বাংলাদেশ রয়েছে এবং ভবিষ্যৎ সাউথ সেন্টারড বিশ্বের প্রেক্ষাপটে আপনি বাংলাদেশের  এই অবস্থানকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমার নানা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একটা স্বপ্ন ছিল যে বাংলাদেশ সাউথ এশিয়ার সুইজারল্যান্ডের মত হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় যত বিনিয়োগ হয়, যত ট্রেড হয়, যত কমিউনিকেশন হয় বাংলাদেশ তার একটা হাব হয়ে দাঁড়াবে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এশিয়ান হাইওয়ের সাথে কানেক্ট হয়েছি, তিনটি ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ভারতে সাথে আমাদের টেলিযোগাযোগের কানেক্টিভিটি চলে এসেছে। আমরা চট্টগ্রাম পোর্ট টাকে সম্প্রসারণ করছি। কারণ আমাদের আশা আছে চীন, নেপাল, ভূটান এমনকি ভারতের পণ্যও আমাদের পোর্ট দিয়ে যাবে। এতে কিন্তু আমরাই লাভবান হব। মায়ানমারের কাছ থেকে আমরা সমুদ্রসীমা জয় করেছি। আগামীবার ক্ষমতায় আসতে পারলে ভারতের কাছ থেকেও আমরা সমুদ্রসীমা জয় করে আনব। একমাত্র আওয়ামীলীগ ফিরে আসলেই এই কাজগুলো হবে। তখন বঙ্গোপসাগরে আমাদের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে আন্তর্জাতিক শীপিং কে আমরা বাংলাদেশে নিয়ে আসব। তখন বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে সাউথ এশিয়া তথা এশিয়ার একটি হাব হয়ে দাঁড়াবে।
 সামিয়া জামানঃ সজীব ওয়াজেদ জয় আপনাকে অনেক ধন্যবাদ একাত্তর টিভির পক্ষ থেকে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। একাত্তর টেলিভিশনকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকারের ইউটিউব লিঙ্কঃ http://www.youtube.com/watch?v=ETOzN8l9J0M

৭ই মার্চ নিয়ে অসাধারণ একটি গান

( আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু। আমরা বাঙ্গালীরা যখনই ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। ২৫ তারিখ এসেম্বলি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি দশ তারিখে বলে দিয়েছি যে ওই শহীদের রক্তের উপর দিয়ে পাড়া দিয়ে আরটিসিতে মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারেনা। -৭ই মার্চের ভাষণ)

“মাগো আবার তোমার গর্ভে আমি জন্ম নিতে চাই
আমি সূর্যসেন বা নূর হোসেন হয়ে আবার ফিরতে চাই
মাগো আবার তোমার গর্ভে আমায় দাও যদি ঠাই
হব ক্ষুদিরামের হাসি নয় সুকান্তের দিয়াশলাই
জয় বাংলা, জয় বাংলা, জয় বাংলা ।।”

( আমাদের এই দেশকে আমরা গড়ে তোলব। এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি, ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করে দশ বছর পর্যন্ত আমাদের গোলাম করে রেখেছে। -৭ই মার্চের ভাষণ )

“এই দেশটা নিয়ে সবাই খেলছে কানামাছি
ভয় নেই মা ভাগিরথী হয়ে আমি আছি
আজও বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ভুলি নাই
আমি একাত্তরের গেরিলা আজ মুক্তির গান গাই
জয় বাংলা, জয় বাংলা, জয় বাংলা ।।”

( আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাইনা, আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই। আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের উপর হত্যা করা হয়, তোমাদের উপর কাছে আমার অনুরোধ রইল। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। - ৭ই মার্চের ভাষণ)

“বার বার মরে মাগো আমি বার বার ফিরে আসি
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি
মাগো তোমার আমার বাধন ছেঁড়ার সাধ্য কারও নাই
আমি একাত্তরের গেরিলা আজ মুক্তির গান গাই
জয় বাংলা, জয় বাংলা, জয় বাংলা ।।”

(আমরা মরতে যখন শিখেছি, কেউ আমাদের দমাতে পারবে না। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাংগালী-অবাংগালী যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের দায় দায়িত্ব আপনাদের উপরে, আমাদের যেন বদনাম না হয়। জয় বাংলা। -৭ই মার্চের ভাষণ)

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে প্রীতম ভাইয়ের কথা, সুর এবং কম্পোজিশনে অসাধারণ একটি গান।

# https://www.facebook.com/photo.php?v=10151348183411448

১৪ই ফেব্রুয়ারি ম্যাডমের জন্মদিন পালন করিবঃ আমির খসরু মাহমুদ

বৃহত্তর জামাতে ইসলামের বিম্পি শাখার নায়েবে আমীর, দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির একমাত্র মালিকিন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন এখন থেকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বৃহত্তর জামায়াতে ইসলামের বিম্পি শাখার চাটগা উপশাখার সিনিয়র নায়েবে আমীর আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। নগরীর লাভলেনে আয়োজিত এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে আমির খসরু এই সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দেশবাসীকেও এখন থেকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ম্যাডমের জন্মদিন পালনের আওভান জানিয়েছেন।

গতকাল চট্টগ্রামে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষ্যে ক্যাক কাটতে গিয়ে বিম্পির দুইগ্রুপের সংঘর্ষের প্রতি ইঙ্গিত করে আমির খসরু বলেন, দলের কতিপয় বালপাকনা নেতা কর্মীর কারণে শান্তিতে ম্যাডমের জন্মদিন পর্যন্ত পালন করতে পারতেসিনা। আরে শালা ঘচুর দল ম্যাডমের তো আর চাইরটা জন্মদিন আছে। তোরা সেইগুলান পালন কর। আমার লগে কামড়াকামড়ি করতে আসস কেন? তাই এখন থেকে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি আমি ম্যাডমের জন্মদিন পালন করব। জন্মদিন পাঁচটা থাকা যে কথা ছয়ডা থাকাও একই কথা। দেশের তাবৎ তরুণ-তরুনীরাও জোড়ায় জোড়ায় আমার লগে ম্যাডমের জন্মদিন পালন করিবে। এই আনন্দ রাখি কুথায়!

আবেগঘন কন্ঠে আমীর খসরু বলেন, ম্যাডমের জন্মদিন উপলক্ষ্যে গতকাল সক্কাল হইতেই আমার মনডা ছিল ফুরফুরা। ঘুম থাইকা উঠিয়া এস্তেঞ্জা সারিয়া গোসল করিয়া নতুন পাঞ্জাবীটা পড়িয়া কাঁচামরিচ কচলাইয়া মাংশ দিয়া দুইলা ভাত খাইলাম। এরপর পাশের বাড়ির ভাবীরে চোখ টিপ মারিয়া শুল্কমুক্ত গাড়িতে চড়িয়া নসিমন ভবনের দিকে যাত্রা করিলাম ম্যাডমের জন্মদিন উৎসব করার লাইগা। ও মা, গিয়া দেখি শালার বেটা শাহাদাত তার সৈন্য সামন্ত লইয়া গেঞ্জাম করবার জন্য রেডি হইয়া আছে। হেতারা শান্তিতে আমারে ক্যাক কাটতে দিল না, আমার গাড়ি পুড়াইয়া, আমার লোকদের পিডাইয়া, ককটেল মকটেল ফুটাইয়া একেবারে ছ্যাড়াব্যাড়া করিয়া দিল। জীবনতো একটাই, এ জীবুনে গ্যাঞ্জামে আমি আর নাই। তাই সামনের বার হইতে ১৪ই ফেব্রুয়ারি আমি ম্যাডমের জন্মদিন পালন করিব। আশা করি ভালুবাসার এইদিনে কেউ গ্যাঞ্জাম করিবে না। ম্যাডমের এই জন্মদিন শুধুই আমার।

১৪ই ফেব্রুয়ারিকেই কেন বেছে নিলেন এই প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, ম্যাডমের সাথে ভালুবাসা ব্যাপারটা খুব যায়। উনি ভালুবাসাকে দেশ থেকে দেশান্তরে যুগ যুগ থেকে যুগান্তরে ছড়াইয়া দিয়াছেন। তাই ভালোবাসা দিবসই ম্যাডমের পয়দা দিবস হিসেবে যুক্তিযুক্ত।

এব্যাপারে বিম্পির নগর উপশাখার জুনিয়র নায়েবে আমীর ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, খসরু মিয়া বিম্পির লোক অথচ নগরীতে উনি আম্লিগের মত বাকশালী আচরণ শুরু করসেন। কিছুদিন আগে আদু বাইদের কমটি দিলেন। আমার একটা পুলাপাইন পোস্ট পায় নায়। আজকেও উনি নিজের বক্তৃতা শেষ করিয়া আতকা ক্যাকটা কাটিয়া ফেলিলেন। আমি দুইরাইত বউরে সময় না দিয়া কস্ট কইরা একটা বক্তৃতা রেডি করসি। সেইটাও দিতে দিলেন না। তাই উনারে একটু শিক্ষা দিলাম। বিম্পিতে কোন বাকশালীর জায়গা নাই। উনার আদুবাই কমিটির সভাপতি সেক্রেটারিরে পিডাইসি, এবার উনার পালা। আমার লগে কুন চুদুরবুদুর চইলতন।
হাসতে হাসতে উনি বলেন, চন্দ্র সত্য, সূর্য সত্য।খসরুর যেকোন কাজে আমি বাগড়া দিমু সেইডাও সত্য। জন্মদিন আরেকটা পয়দা করে পার পাবা না খসরু মিয়া। সেইডারেও খায়া দিমু।

এদিকে খসরুর সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এফডিসিতে আটার বস্তা হিসাবে পরিচিত এক্সট্রা শিল্পী নাসরিন বানু। উৎফুল্ল কন্ঠে তিনি বলেন, খসরু বাই এতোদিনে ম্যাডমের জন্য পারফেক্ট একটা জন্মদিন খোজে বের করসেন। আমি উনার সাথে আছি। ময়ুরী আর কনক চাপার মত আমিও খসরু ভাইয়ের হাত ধইরা বিম্পিতে যোগ দিব। এক্সট্রা বইলা কি আমার স্বাদ আহ্লাদ নাই। আমারও তো এম্পি হইতে মুঞ্চায়। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।

7

ভয়াল ১৭ই আগস্ট

আজ সেই ভয়াল ১৭ই আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কালো দিন। দেশকে জঙ্গীবাদী রাস্ট্রে পরিণত করার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৫ সালের এই দিনে দেশের ৬৩ টি জেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থানে একযুগে বোমা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এ বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২ জন, আহত হয়েছিলেন শতাধিক।

মূলত, তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি জামাত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই দেশব্যাপী জঙ্গীবাদের কালো থাবা বিস্তার করতে পেরেছিল জেএমবি। রাজশাহী অঞ্চলে জেএমবি যখন সশস্ত্র মহড়া দিয়ে বেড়াত তখনো তৎকালীন সরকারের কর্তা ব্যাক্তিরা বলেছেন যে, জেএমবি বলতে কোন সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। এটা মিডিয়ার সৃষ্টি। সরকারের এই সহায়তাকে কাজে লাগিয়েই দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে জেএমবি। যার ফলে দেশব্যাপী বোমা হামলা চালানোর মত ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয় তারা।

১৭ই আগস্ট বোমা হামলার পর তৎকালীন জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর স্বীকার করেন যে, বোমা হামলার ঘটনা জেএমবিই ঘটিয়েছে। কিন্তু মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বাবরের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন জামায়াতের দুই এমপি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এবং রিয়াসত আলী বিশ্বাস। সাঈদী তার বক্তব্যে বলেছিলেন, “দেশে একটা পুতুল সরকার স্থাপনের নীল নকশার অংশ হিসাবে এই বোমা হামলা ঘটানো হয়েছে -যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে অবিভক্ত ভারতের অংশ বানানো যায়। বাংলাদেশকে আফগানিস্থান এবং ইরাকের মতো বিদেশী শক্তির আক্রমনের লক্ষ্যস্থল বানানোর নীলনক্সার অংশ হিসাবেই এই বোমা হামলা হয়েছে।”

বিএনপি জামাত জোট সরকারের স্বদিচ্ছার অভাবের কারণেই এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তী এক বছরে দেশে বেশ কয়েকটি বোমা হামলা হয় যার মাঝে আত্মঘাতী বোমা হামলাও ছিল। এসব ঘটনায় বিচারপতি সহ নিহত হন ৩২ জন, আহত হন সহস্রাধিক মানুষ। অবশেষে নিষিদ্ধ হয় জেএমবি। কিন্তু ততদিনে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের নতুন আস্তানা হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। যা এই অভাগা দেশের কপালে যোগ করেছে কলঙ্কের আরেকটি তিলক। এখনও অনেক দেশে ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশী পাসপোর্ট ধারীদের সন্দেহের চোখে দেখা হয়নি। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের নতুন আস্তানা হিসেবে পরিচিত করে তোলার দায় বিএনপি জামায়াত জোটকেই নিতে হবে।

আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ে জঙ্গীবাদের কালো থাবা থেকে দেশ অনেকাংশেই মুক্ত আছে। কিন্তু সম্প্রতি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ বেশি কিছু উগ্রবাদী সংগঠনের নেতা কর্মী গ্রেফতার হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমানিত হয় যে গোপনে গোপনে এখনও জঙ্গিবাদী কার্যক্রম এদেশে চলছে। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে। কিন্তু মূল ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকেই। সকল উগ্রপন্থী জঙ্গী সংগঠনের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুততম সময়ের মাঝে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশ থেকে জঙ্গিবাদকে সমূলে উৎপাটিত করতে হবে। নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে আমরা কেউই চাইনা আমাদের সোনার বাংলা আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের ভাগ্য বরণ করুক।

কিভাবে হবেন একজন আদর্শ ভারতবিরোধী

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই দাঁত ব্রাশ করার জন্য ব্রাশটা হাতে নিয়ে ইন্ডিয়ান ক্লোজআপ অথবা কোলগেট টুথপেস্টের ছিপি খুলে প্রয়োজন মতো পেস্ট মেখে নিবেন। এবার হাঁটতে হাঁটতে আবার বেডরুমে যাবেন। কম্পিউটারে মিডিয়া প্লেয়ার ওপেন করে ফুল ভলিউমে ‘আব তুম হি হো’ গানটা ছেড়ে দিবেন। গুন গুন করতে করতে বাথরুমে ঢুকুন। শরীরটা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে স্ট্রবেরি ফ্লেভারড লাক্স সাবান গায়ে মাখুন। মাথায় মাখুন অলক্লীয়ার শ্যাম্পু। গোসল করে বেরিয়ে এসে একটি ভালো টাওয়েল দিয়ে শরীরটা মুছে ফেলুন। এরপর পুরো গায়ে পন্ডস বডি লোশন মাখুন। গায়ে জড়িয়ে নিন রূপা গেঞ্জি, আন্ডারওয়ার। জামা পরা শেষ হলে একটি ভারতীয় পারফিউম বগলের নীচে স্প্রে করে নিন।

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আইপডে এ আর রহমানের হিন্দি গান ছেড়ে দিয়ে হেডফোনটা কানে লাগান। পার্কিং থেকে হিরো অথবা পালসার হোন্ডাটা বের করে চলে যান গন্তব্যে।

সারাদিন কাজকর্ম সেরে সন্ধ্যায় বন্ধুদের আড্ডায় বসে চেন্নাই এক্সপ্রেস এবং আশিকি-২ নিয়ে বিতর্কটা সেরে নিন। বেশিক্ষণ থাকবেন না যেন। তিস্তা চুক্তি আর রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ব্লগ এবং ফেসবুক ভীষণ উত্তপ্ত। বাসায় ফিরেই গ্যাজাতে হবে যে!

বাসায় ফিরে চাইলে একবার পরিবারের সাথে বসে স্টার প্লাস অথবা জি বাংলার সিরিয়াল কিছুক্ষণ দেখতে পারেন। ফ্রেশ হয়ে কিছু মুখে দিয়েই কম্পিউটারের সামনে চলে আসুন।

“দেখুন না, আজও সীমান্তে একজনকে মেরে ফেলেছে বিএসএফ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও এতো মানুষ মারা যায়নি, বর্তমান সরকারের আমলে বিএসএফের হাতে যত মানুষ মারা গেছে।” নিশ্চয় ফেসবুকে এ স্টাটাসটাই দিলেন? এবার আরো লিখুন “আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করে ভারতীয় দালালদের এ বাংলার মাটিতে পুঁতে ফেলা হবে।”
কাইন্ডলি এবার একটু ব্লগে যাবেন। তিস্তা চুক্তি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে একজনে একটা পোস্ট দিয়েছে। সেখানে গিয়ে কমেন্ট করুন “আবারো বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন। ভারতের পা চাটা কুত্তা, দালালদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।” এরপর দেখবেন জামায়াতকে ক্ষমতায় আশা করার জন্য কেউ এসে আপনাকে ছাগু বলবে। আপনি তাকে ভাদা (ভারতীয় দালাল) বলুন।

এভাবে নিজেকে বদলে ফেলতে পারেন। হয়ে উঠতে পারেন একজন আদর্শ ভারতবিরোধী। জীবনে আনতে পারেন গতি। তার জন্য প্রয়োজন এক কাপ লিপটন তাজা তরল শান্তি।

আহ ভারত বিরোধী, বাহ ভারত বিরোধী।

কারটেসিঃ দৈনিক মগবাজার (অনুলিখিত)