রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৩

মুজাহীদের ফাঁসির রায় এবং একটি আঁতাতের গল্প




জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল, আলবদর বাহিনীর প্রধান মানবতাবিরোধী অপরাধী আলী আহসান মুজাহীদের ফাঁসির রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। জাতি হয়েছে কলঙ্কমুক্ত এবং উদ্বেলিতস্বর্গলোকে থেকেও নিশ্চয়ই শান্তি পাচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা রুমি, বদি, আজাদের আত্মা। শান্তি পাচ্ছে সুরকার আলতাফ মাহমুদের আত্মা, শান্তি পাচ্ছে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আত্মা।  
আলী আহসান মুজাহীদের বিরুদ্ধে আনীত ৭ টি অভিযোগের ৫ টিই সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন রাস্ট্রপক্ষের প্রসেকিউটরবৃন্দ। তাই নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় আসামী পক্ষ আপীল করলেও রায়ের কোন হেরফের হবে নাআবুল কালাম আজাদ, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এবং কামরুজ্জামান এর সাথে আলী আহসান  মুজাহীদেরও ফাঁসির দড়িতে ঝোলা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমাদের ধৈর্য ধারন করতে হবে। কারন বিচারের প্রক্রিয়া একটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চলে। আবেগ দিয়ে চলে না। ধর তক্তা, মার পেরেক টাইপ বিচার একমাত্র  জলপাই রঙের পোশাক ধারীদের পক্ষেই করা সম্ভব ( জিয়াউর রহমান যেভাবে কর্নেল তাহেরের বিচার করেছিলেন )। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোন আদালতে এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল নিরলসভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বিচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তাতে তার প্রতি আমাদের সার্বিক নৈতিক সমর্থন দিয়ে যাওয়াই উচিৎএমন কোন মন্তব্য বা কর্মসূচী কখনোই দেয়া উচিত নয়, যা এই ট্রাইবুন্যালকেই বিতর্কিত করে। কারণ এই ট্রাইবুন্যাল আমাদের অনেক আশা ভরসার প্রতীক, জাতির কলঙ্ক মোচনের হাতিয়ার।  
গত ১৫ই জুলাই গোলাম আজমের রায়ের পর অনেকেই অসন্তুষ্টি জ্ঞাপন করেছেন। সরকার তথা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে আঁতাতের অভিযোগ এনেছেন। তাদের উদ্দেশ্য বলছি, একবার কি ভেবে দেখছেন যে গোলাম আজমের ক্ষেত্রে আতাত করে আওয়ামীলীগের লাভ টা কি? আওয়ামীলীগ যদি আতাত করতো তাহলে চল্লিশ বছর পর  মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারই শুরু হত না, আওয়ামীলীগ ছাড়া আর কেউ তো এই বিচারের নুন্যতম উদ্যোগও নেয়নিআর জামায়াতের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে যদি দেখেন, জামায়াতের প্রথম তিনজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি কে যদি বাছাই করা হয় তারা হবে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, আলী আহসান মুজাহীদী এবং তৃতীয় জন মীর কাশেম আলি। দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর দেশব্যাপী একটা অনুসারী গ্রুপ আছে, শিবিরও তাকে তাত্ত্বিক নেতা হিসাবে সম্মান করে। আলী আহসান মুজাহীদীর সাংগঠনিক দক্ষতা জামায়াতের অন্য যে কারও থেকে বেশি। আর মীর কাশেম আলীর আছে অঢেল অর্থ, সে জামাতের মূল অর্থ যোগানদাতাঅতএব জামায়াত এই  তিনজনকে বাচানোর জন্যই সর্বোচ্চ চেস্টা করেছে এবং করবে। যেখানে সাঈদী এবং মুজাহীদের মত জামাতের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ফাঁসী  হয়েছে সেখানে আপাত অথর্ব নব্বই বছরের বৃদ্ধ গোলাম আজমের ক্ষেত্রে আতাত হয়েছে- এটা নিতান্তই হাস্যকর একটি কথা এই ধরণের আঁতাত তো জামায়াতই করবে না, যেখানে তাদের কোন লাভ নেই। অতএব, এক ধরনের হাইপোথেটিকাল আঁতাতের গন্ধ যারা খোঁজে বের করার চেস্টা করছে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কেই আমার মনে প্রশ্ন জাগে?   
অনেকে বলছেন রায় হয়েছে কিন্তু কার্যকর হবে না। একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে চাই। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল গঠিত হওয়ার আগেও অনেকে বলেছে যে আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধের বিচারই করবে না। যখন ট্রাইবুন্যাল গঠিত হল তখন অনেকে বলেছে যে অপরাধীরা গ্রেফতার হবেনা বা বিচার শুরু হবেনা। যখন একে একে সব অপরাধী গ্রেফতার হল এবং বিচার শুরু হল তখন তারা বলেছে যে রায় হবেনা। আর এখন যখন একে একে রায় হচ্ছে এবং জাতি কলঙ্ক মোচনের শেষধাপে উন্নীত হচ্ছে তখন তারা বলছে যে রায় কার্যকর হবেনা। আমার মনে হয় দুধের মাঝেও কাটা খোজে বেড়ানো তথাকথিত চেতনাধারী এই গোষ্ঠী যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে দেশের কলংমোচন হোক এটাই চায় না। কলংকমোচন হয়ে গেলে তারা সমালোচনা করবে কিভাবে? এটাই যে তাদের একমাত্র কাজ।
এবার আসুন সবাইকে আঁতাতের গল্প বলে বেড়ানো গণজাগরণ মঞ্চের বর্তমান অবস্থাটা একটু পর্যালোচনা করে  দেখা যাক। এদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের আপামর জনসাধারণ এই মঞ্চকে তাদের মনের মণিকোঠায় স্থান দিয়েছিল। কিন্তু মানুষের সেই আবেগ নিয়ে খেলা করেছে এই মঞ্চের স্বঘোষিত নেতৃবৃন্দরা। তারা একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত এবং কর্মসূচী দিয়ে এই মঞ্চকে হাস্যস্পদ করে তুলেছে সবার কাছে। ভাবতে অবাক লাগে কতটুকু নির্বোধ হলে এরা জামায়াতের সাথে একই দিনে হরতাল কর্মসূচী গ্রহন করতে পারে। জামাত শিবিরের মত গাড়ি ভাংচুর করতে পারে, যে পুলিশ দিনের পর দিন তাদের পাহারা দিয়েছে তাদের গায়ে হাত তুলতে পারে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধেও এরা শ্লোগান দিয়েছে আওয়ামীলীগের সরকার, রাজাকারের পাহারাদার অথচ এই আওয়ামীলীগ ছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচার আর কেউ করেনি এবং করবেও না। কোথায় ছিল এই চেতনা ব্যাবসায়ীরা যখন রাজাকার দের গাড়িতে পতাকা তুলে দেয়া হয়েছিল? তখন তারা ছিল নিশ্চুপ। অথচ যে আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধীদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করছে সেই আওয়ামীলীগ সরকারের সময় আন্দোলন করে তার বিরুদ্ধেই শ্লোগান দেয়া হচ্ছে। সতিই সেলুকাস, কি বিচিত্র এই চেতনার আস্ফালন। এই চেতনা ব্যাবসায়ীদের ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। শুধু এটুকুই বলতে চাই অবিলম্বে গণজাগরণ মঞ্চ নামক ব্যানার ব্যাবহার বন্ধ করা উচিৎ। কারন, এখন মানুষের প্রত্যাশার সাথে এর কাজের বিন্দুমাত্র মিল খোজে পাওয়া যায়না এটা হয়ে উঠেছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিলের প্ল্যাটফর্ম।    

1 টি মন্তব্য:

  1. ভাই কথা সত্য এরা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বুঝে না।
    ঐ যে ভাই কথায় আছে না, "যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর"

    উত্তরমুছুন