রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৩

দীপ নিয়ে দুঃখগাথা

গেল দীপ

by Aminul Hoque Polash (Notes) on Tuesday, July 2, 2013 at 7:21pm
 দীপ। নামের সাথে ব্যাক্তিত্বের আশ্চর্য মিল ছিল ছেলেটির। সবসময় নিজের চারপাশটা আলোকিত করে রাখত সে। কিন্তু সেই সদা হাস্যোজ্জল, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর ছেলেটির জীবন প্রদীপ নিভে গেল অকালেই। নিভিয়ে দিল মৌলবাদী ঘৃণ্য অপশক্তি।
আরিফ রায়হান দীপ বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে, নিজের আলোয় সমাজকে আলোকিত করার প্রত্যয় নিয়ে বুয়েট জীবন শুরু করেছিল ছেলেটি। প্রগতিমনা এই ছেলেটি অতি অল্প সময়েই আপন করে নিয়েছিল এই বুয়েটকে। বুয়েটও তাকে জড়িয়ে ছিল মায়ার বাঁধনে। অথচ কি অসময়েই সেই বাধনটি ছিঁড়ে গেল। সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়র প্রত্যেকেরই অতি প্রিয় মানুষ ছিল সে। কেউ কখনো গোমড়া মুখে দেখে নি তাকে। দেশপ্রেমের দৃপ্ত চেতনা ছিল মনে। প্রগতিশীল আন্দোলনের একজন হওয়ার আশা নিয়েই যোগ দিয়েছিল ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগে। অতি অল্প সময়েই হয়ে উঠেছিল বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় সংগঠক। জামাত-শিবির ও মৌলবাদীদের দেশবিরোধী যেকোন কাজে সে হত প্রতিবাদমুখর। বুকভরা সাহস নিয়ে এগিয়ে যেত তাদের রুখে দেয়ার জন্য। ৫ই ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হওয়ার প্রাক্কালেই শাহবাগে উপস্থিত হয় সে। নিজ হাতে প্ল্যাকার্ডে লিখেছিল, “এই পথে আজ জীবন দিব, রক্তের বদলা ফাঁসি নেব”। অনেকেই মুখে চেতনার কথা বলতে পারে, কিন্তু কতজন পারে দীপের মত নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে? দীপরা তাই মরেও মরে না, মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে বেঁচে থাকে মানুষের মনের মণিকোঠায়।
৬ই এপ্রিল মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে বুয়েটের শহীদ স্মৃতি হলের ইমাম হলের ডাইনিং থেকে খাবার রান্না করে নিয়ে যান নিয়ম বহির্ভূতভাবে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে অবিচল দীপ ও তাঁর বন্ধুরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করে। তাদের দাবির মুখেই সাময়িক ভাবে অপসারণ করা হয় সে ইমামকে। দীপের প্রধান লক্ষ্যই ছিল বুয়েটকে মৌলবাদের হিংস্র ছোবল হতে রক্ষা করা। সে লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে কি চরম মূল্যই না দিতে হল তাকে। উক্ত ঘটনার জের ধরে গত ৯ই এপ্রিল বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে আততায়ীর হাতে মারত্মকভাবে জখম হয় সে। চিকিৎসার জন্য তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আজন্মযোদ্ধা দীপ কখনোই লড়াই না করে হারতে শিখেনি। মৃত্যুও তাকে হারাতে পারেনি সহজে। সুদীর্ঘ ৮৩ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে আজ ভোর ৪ টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে।
দীপকে নৃশংসভাবে আহত করা আততায়ী বুয়েটছাত্র মেজবাহ কে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হেফাজতে ইসলামের সমর্থক মেজবাহ এ ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে জবানবন্দীও দিয়েছে।

দীপরা জন্মযোদ্ধা। এরাই প্রকৃত বীর। এরাই সবসময় শুকরের সাথে সহবাসের ফতোয়া অস্বীকার করে দৃপ্তকন্ঠে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানায়। এর জন্য চরম মুল্যটাও এদেরকেই দিতে হয়। তবুও এরা ভয় পায় না। এই অকুতোভয় দীপরা আছে বলেই এখনো টিকে আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এদের জন্যই এখনো মৌলবাদের আখড়া হতে পারেনি এই সোনার বাংলা। কিন্তু আফসোস, এই রাষ্ট্র এই বীরদের ধরে রাখতে পারেনা। দীপের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে মাধ্যমেই এই রাষ্ট্র কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করতে পারে।
এই সমাজ, এই রাষ্ট্রকে তুই ক্ষমা করে দিস দীপ। কাপুরুষ এই সমাজে তোদের মত সাহসীদের  আসলেই স্থান নেই। তবে এটুকু জেনে রাখিস তোকে আমরা কখনোই ভুলব না, ভুলতে পারবোনা। তুই আমাদের চেতনায় সবসময়ই জাগ্রত থাকবি শিখা অনির্বাণের মত, আকাশের তারা হয়ে মৌলবাদবিরোধী সংগ্রামে আমাদের পথ দেখাবি নিরন্তর। সকলের আদর্শ হয়ে বেঁচে থাকবি আমাদের মাঝে।
সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই নিবেদন, আমাদের দীপকে তুমি তোমার সর্বচ্চ স্থানে ঠাই দিও। এই  জনমে সে তার যোগ্য মর্যাদা পায়নি। তুমি সেটা পুষিয়ে দিও।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন