মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

কাদের মোল্লার রায়ের প্রেক্ষিতে কিছু কথা




আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামের পঞ্চম শীর্ষ নেতা কাদের মোল্লা ওরফে কসাই কাদেরের বিচারের চূড়ান্ত রায় দিয়েছে। সকলের প্রত্যাশামাফিক এই রায় হয়েছে ফাঁসি। বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে এ এক অনন্য মাইলফলক। এ অর্জন এদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের প্রতিটি মানুষের অর্জন। এ অর্জন এদেশের লাখ তরুণের বজ্র নিনাদ কন্ঠে ধ্বনিত শ্লোগানের বিনিময়ে অর্জন। এ অর্জন রাজীব হায়দার, জাফর মুন্সী, জগতজ্যোতি তালুকদার, আরিফ রায়হান দীপ এর রক্তের দামে কেনা অর্জন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই অর্জন স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।

অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারকে। কারণ শত প্রতিকূলতার মাঝেও জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে এই সরকারই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করেছে। ধন্যবাদ জানাতে চাই প্রজন্মের সকল যোদ্ধাদের যারা দীর্ঘ সময় ধরে এই রায় আদায়ের জন্য রাজপথে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।

কিছু অপ্রিয় সত্য কথা বলি। দুধের মাঝে কাটা খোজার মত অনেকেই জামাতের সাথে আওয়ামীলীগের আঁতাত খুজে বেড়িয়েছেন প্রতিনিয়ত। গোলাম আজমের রায়ের পর মুচকি হেসে বলেছেন, বলেছিলাম না আঁতাত হয়েছে। আমরা তখন চুপ থেকেছি, বিশ্বাস রেখেছি জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর যার ধমনিতে হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ধাবমান, যে রক্ত কখনো বেইমানি করতে জানে না। কাদের মোল্লার আপিলের রায় দিতে এত দেরি হচ্ছে কেন-তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। অথচ একটিবার খোজ নিয়ে দেখেননি কিভাবে চলছে বিচারের কার্যক্রম। বিচারটিকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে ট্রাইবুন্যাল রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের বক্তব্য নেয়ার পাশাপাশি সাতজন অ্যামিকাস কিউরির মন্তব্য নিয়েছেন। এর জন্যই কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। অবশেষে আমরা পেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত চূড়ান্ত রায়, কাদের মোল্লার ফাঁসি। প্রমাণিত হল এদেশে ভিক্টরি সাইন শুধু স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষই দেখাবে, কোন রাজাকার নয়। এ রায় কবে কার্যকর হবে, আদৌ হবে কিনা এটা নিয়েও সংশয়বাদীরা নানা কথা বলছেন। এটা নিয়ে আমরা কিছুই বলব না। বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলে পরিচয়। কিছুদিনের মাঝেই যখন ফাঁসির দড়িতে ঝুলবে কসাই কাদেরর লাশ তখন আমরা মুচকি হাসব, আবারও ভিক্টরি সাইন দেখাব। সেই ভিক্টরি সাইনই হবে সংশয়বাদীদের গালে চরমতম চপেটাঘাত।

এবার আসুন মূদ্রার অপর পিঠটা খেয়াল করি। বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে এদেশে পুনর্বাসিত করেছে, তাদের সাথে জোট বেঁধেছে, তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে-এসব পুরানো ইতিহাস। সবাই জানেন। সাম্প্রতিক সময়ের দিকে খেয়াল করুন। গতকাল ও গত পরশু আঠারদলীয় জোটের জনসভায় বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের রাজবন্দী উল্লেখ করে তাদের মুক্তি দাবি করেছেন। জনসভাগুলোয় খালেদা জিয়ার সাথে একই বেলুনে উড়েছে গোলাম আজম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, কাদের মোল্লা, মতিউর রহমান সহ অন্যান্য রাজাকারের ছবি। এমনকি আজকে কাদের মোল্লার রায়ের পর জামায়াতের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাজ্জাক যে সংবাদ সম্মেলন করেছে সেই সংবাদ সম্মেলনেও হাজির ছিলেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ হোসেন ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন বিএনপি যদি পুনরায় এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে এই যুদ্ধাপরাধীদের কি হবে।  তারা সবাই সসম্মানে জেল থেকে বেড়িয়ে এসে পুনরায় রাষ্ট্রীয় পদে অসীন হবে। তারপরও কি আপনারা এই ভুল করবেন?

ভাইরে, ৪২ বছরের ক্ষত এত অল্প সময়ে শুকাবার নয়। এই সংগ্রাম টেস্ট ম্যাচের মত, টি-টুয়েন্টির মেজাজ নিয়ে খেললে হবে না। যে আশা নিয়ে আপনারা ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগকে বিপুল ম্যান্ডেট দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়েছিলেন তা পূরণ করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার তার যথাসর্বস্ব করেছে। আবার আমরা আপনাদের কাছে এসেছি ভোটের জন্য। সামনের জাতীয় নির্বাচনে যদি আওয়ামীলীগকে পুনরায় নির্বাচিত করেন তাহলে আপনাদের সব প্রত্যাশা পূরণ হবে। সকল যুদ্ধাপরাধীদের সাজা কার্যকর হওয়ার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়ন হবে। বাংলাদেশ হয়ে উঠবে সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা। বিশ্বাস রাখুন জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর, বিশ্বাস রাখুন আওয়ামীলীগের উপর। তাঁরা আপনাদের কখনোই হতাশ করবেন না। আর যদি এর অন্যথা হয় তাহলে আওয়ামীলীগ যতটা না ক্ষতিগ্রস্থ হবে তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতি হবে এই দেশের, এদেশের মানুষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার। বাকিটা আপনাদের বিবেচনা।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ।।
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন