শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

শেখ হাসিনাঃ যার মাঝে খোঁজে পাই জাতির পিতাকে


কখনো তিনি মমতাময়ী মাতা, কখনো তিনি স্নেহময়ী ভগিনী। এই দুখী বাংলার মানুষকে তিনি নিজের পরিবারের সদস্যদের মতই ভালোবাসেন, দিনরাত তাঁদের কল্যাণে কাজ করে যান। পরম মমতায় আগলে রাখেন তাঁর সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীকে। আবার তাঁর দৃঢ় ও অবিচল রুপটিও প্রায়শই দেখতে পাই আমরা। দেশের যেকোন সমস্যাই নিঃশঙ্কচিত্তে নির্ভয়ে মোকাবেলা করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার সংগ্রামে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেনএকজন দক্ষ মাঝি যেমন প্রচন্ড ঝড়ের মাঝেও নৌকাকে তীরে পৌছে দেয়, ঠিক তেমনি করে এই মানুষটিও বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে নিয়ে যাচ্ছেন সাফল্যের বন্দরে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে তাঁর প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র বিশ্বব্যাপী। হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কথাই বলা হচ্ছে। আজ এই মহান মানুষটির ৬৭ তম জন্মদিন। জন্মদিনের এইক্ষনে বিবার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে  জানাই প্রাণঢালা অভিবাদন ও শুভকামনা।  

১৯৪৭ সালের ২৮ই শে সেপ্টেম্বর বেগম ফজিলাতুন্নেসা কোল আলো করে জন্ম গ্রহন করেন এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান। বাবা শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর নাম রাখেন শেখ হাসিনা। যদিও হাসু নামেই বেশি ডাকা হত তাঁকে। বাবার সান্নিধ্য খুব বেশি পাওয়া হয়নি তাঁর। মায়ের কাছেই বেড়ে উঠা। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বাবার প্রতিটা কার্জক্রম অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতেন শেখ হাসিনা। এভাবেই দেশ, দেশের মানুষ ও রাজনীতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা গড়ে উঠে। পড়াশোনা করেছেন আজিমপুর গার্লস স্কুল, বদরুন্নেসা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী থাকা অবস্থাতেই তাঁর রাজনীতির হাতেখড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন পুরোটা সময়েই সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। এরই মাঝে ১৯৬৮ সালে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শেখ হাসিনা। 

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পশ্চিম জার্মানিতে পাঠ্যরত অবস্থায় থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোটবোন শেখ রেহানা। ৭৫ পরবর্তী সময়ে দেশে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। ক্ষমতালোভী তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী একথা খুব ভালোভাবেই জানত যে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসলে পুনরায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাস্তবায়ন শুরু হবে এদেশে। তাই তারা নানাভাবে শেখ হাসিনার দেশে আসা ঠেকাতে তৎপর থাকে। 

১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়অবশেষে ১৯৮২ সালে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। তাঁকে বরণ করে নেয়ার জন্য লক্ষ মানুষের ঢল নামে বিমানবন্দরে। আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা শ্লোগানে উত্তাল করে তুলেন চারপাশ, শেখ হাসিনা ভয় নাই, আমরা তোমার লক্ষ ভাই দেশে ফিরেই জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার সংগ্রাম শুরু করেন শেখ হাসিনা। তিনি এবং তাঁর দল এরশাদ বিরোধী দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেন এবং দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে ১৯৯০ সালে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে স্বল্প ব্যবধানে পরাজিত হয় আওয়ামীলীগ এবং সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী হন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালের জাতীর নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামীলীগ এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন করেন শেখ হাসিনা। শুরু হয় দেশের উন্নয়ন কাজ। বংগবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে সর্বশক্তি দিয়ে আত্মনিয়োগ করেন শেখ হাসিনাবিচারের আওতায় আনা হয় বংগবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের যাদের পুনর্বাসিত করেছিল পূর্ববর্তী শাসকগোষ্ঠী।

২০০১ সালের নীলনকশার নির্বাচনে পরাজিত হয় আওয়ামীলীগ। শেখ হাসিনা আবারও ফিরে যান বিরোধীদলীয় নেত্রীর ভূমিকায়। তৎকালীন বিএনপি জামাত জোট সরকারের অপরিণামদর্শী কাজের ফলে দেশে আবারও ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায় অনির্বাচিত সরকার। কারাবরণ করতে হয় শেখ হাসিনা সহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় সব নের্তৃবৃন্দকে। অবশেষে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দ্বিতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন। দেশের উন্নয়নে শুরু হয় ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি যুদ্ধাপরাধীদের। ২০২১ সালের মাঝে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ ডিজিটাল সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। 

আজন্ম সংগ্রামী শেখ হাসিনাকে তাঁর জীবনের বাকে বাকে নানা বিপদ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সর্বংসহা মত সবকিছু সহ্য করে দেশ গড়ার সংগ্রামে অবিচল আছেন তিনি। তাঁর দলের নেতাকর্মীরাও উনাকে ভালোবেসেছেন নিজের জীবনের চেয়েও বেশি। ১৯৮৭ সালে ২৪শে জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত জনসভায় তাঁর উপর হামলা চালায় তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর লেলিয়ে দেয়া বাহিনী। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বৃষ্টির মত গুলি ছোড়া হতে থাকে মঞ্চের দিকে। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা মানবদেয়াল রচনা করে নিজেদের জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করেন তাঁদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে। একই ভাবে ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট তৎকালীন বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে ২৩,বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামীলীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে মৌলবাদী অপশক্তি। সেসময়ও মানবদেয়াল তৈরি করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ভাবতেও অবাক লাগে, মানুষের মনের মনিকোঠায় কত উচ্চ আসনে অসীন হলে কেউ তাঁদের নেত্রীর জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারে। শেখ হাসিনার অবস্থান আওয়ামীলীগের প্রতিটি নেতা কর্মী ও সমর্থকের আবগের সর্বোচ্চ শিখরে। 

দেশের গন্ডি পেরিয়ে শেখ হাসিনার অবদান আজ বিশ্বদরবারেও স্বীকৃত। শেখ হাসিনা বর্তমানে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় ৭ম স্থানে রয়েছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে অবদান রাখায় উনি দেশে বিদেশে সম্মানিত হয়েছেন নানা পুরষ্কারে। ৩০ ডিসেম্বর,২০১১ সালে শেখ হাসিনাকে বাংলা ভাষার ধারক ও বাহক হিসেবে বাংলা একাডেমি তাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। এছাড়াও,১২ জানুয়ারি,২০১২ইং তারিখে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি এবং উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে ডক্টর অব লিটারেচার বা ডি-লিট ডিগ্রী প্রদান করে। জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনেও উনি সম্মান সূচক সাউথ সাউথ পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। 

দুই সন্তানের জননী শেখ হাসিনা,পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। শেখ হাসিনা অনেকগুলো বইও রচনা করেন। তার লেখা বইয়ের মধ্যে ওরা টোকাই কেন ,বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম,দারিদ্র বিমোচন ও কিছু ভাবনা,আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি,বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন,সামরিক তন্ত্র বনাম গণতন্ত্র,আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ,বিপন্ন গণতন্ত্র,লাঞ্ছিত মানবতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

একমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বই পারে বাংলাদেশকে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে দিতে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করি যেন উনি জাতির পিতার সকল অসমাপ্ত কাজ শেষ করে যেতে পারেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন