শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

সন্ত্রাসীদের সাথে বসে কোন পরিবর্তন আসবে নাঃ জয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তরুণ প্রজন্মের সাথে এক খোলামেলা আলোচনায় বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীর সাথে বসে কোন পরিবর্তন আসবে না। পরিবর্তন আনতে পারেন আপনারাই। ভোটের মাধ্যমে।’ তিনি সন্ত্রাস মুক্ত সুখী সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আওয়ামীলীগ কে পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনার জন্য তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান।

কিছুদিন আগে রাজধানীর গুলশানের একটি মিলনায়তনে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থীর সাথে ‘লেটস টক’ নামক একটি অনুষ্ঠানে আলোচনায় মিলিত হন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। আজ রাত ৮ টায় বেসরকারি টেলিভিশন 'চ্যানেল আই' এই অনুষ্ঠানটি প্রচার করে।

অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় জয় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দেন। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী চলা এই অনুষ্ঠানে রাজনীতি, অর্থনীতি, হত্যা, যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কথা বলেন জয়। 

সরকারের সফলতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীপুত্র বলেন, ‘এই পাঁচ বছরে আমরা বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান করেছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে অর্ধেক পথ এগিয়েছি। আরো অর্ধেক পথ কিন্তু বাকি আছে। আর বাকি যেসব সমস্যা আছে আশা করি আওয়ামী লীগ আবার এলে আমরা সেগুলোর সমাধান করতে পারবো। আমরা যেটা করেছি, আগের সরকারগুলো করেনি। আমরা গ্রামাঞ্চলে ভাতা দেওয়া শুরু করেছি। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বিস্তৃতি এতো বাড়িয়েছি যা আগের কোন সরকারের আমলে ছিল না। যারা দরিদ্র তারা ভাতা, চাল-ডাল পাচ্ছে।’

বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড ও লিমন প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘ সভ্য সমাজের নাগরিক হিসেবে এমরা এটা সহ্য করতে পারি না। সহ্য আমরা করিনিও। যারা বিশ্বজিতকে হত্যা করেছে তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দল বা পারিবারিক পরিচয় কিছুই কিন্তু দেখা হয়নি। আমাদের দেশে ১৫ কোটি মানুষ। সবকিছু পারফেক্ট হবে সেটা কিন্তু আশা করতে পারেন না। তবে সরকারের দায়িত্ব যারা আইন ভাঙবে তাদের বিচার করা, সেটা আমরা করেছি। যে সরকার বিচার করেছে আপনারা কিভাবে তার দোষ দেবেন? ছাত্রলীগ-যুবলীগের সব যে খারাপ তা নয়, কয়েকজনের জন্য দুর্নামটা হয়। আওয়ামী লীগ একমাত্র সরকার যার আমলে ছাত্রলীগের ৬০০ জনকে জেল দেওয়া হয়েছে গত পাঁচ বছরে”

বিএনপি-জামাত শাসনামলের প্রতি ইঙ্গিত করে জয় বলেন, ‘১০ বছর আগে কতজন মানুষ মারা গিয়েছিল ছাত্রদলের হাতে, আর কয়জন ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? আপনারা যদি আশা করেন, পাঁচ বছরের মধ্যে সব হয়ে যাবে, বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়ে যাবে, সেটা কি সম্ভব? বিষয়টা হচ্ছে উন্নতি হচ্ছে কি না? মানবাধিকারের ক্ষেত্রে মারাত্মক ইমপ্রুভমেন্ট হচ্ছে। হ্যাঁ ভুলভ্রান্তি হয়েছে, তবে সরকার তার দায়িত্ব পালন করেছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই দায়িত্ব পালন করেছে। সরকারের ভুল হতেই পারে, তবে আমরা সামনের দিকে এগোচ্ছি কিনা, সেটাই হচ্ছে বিষয়।

রাজধানীতে ট্রাফিক জ্যাম নিরসনের ব্যাপারে বর্তমান সরকারের গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে জয় বলেন, ‘এতোগুলো ফ্লাইওভার দেখছেন, পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজ সব এই সরকারের আমলেই করা হয়েছে। এত দ্রুত কোন সরকার এ ধরণের উন্নয়ন কাজ করতে পারেনি। ট্রাফিক জ্যাম সম্পূর্ণ নিরসনের পরিকল্পনা আছে আমাদের। তবে দুটো সমস্যা। ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে এবং ট্রাফিক ডিসিপ্লিন আনা। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যার অভাব। আমরা পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম নিয়ে আসছি। বড় বড় অনেক বাস এনেছি। মেট্রো সিস্টেম ফাইনাল স্টেজে চলে এসেছে। আগামীতে এটা হয়ে যাবে। তবে এর জন্য আবার আওয়ামী লীগ সরকারের প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সরকার না আসলে কিন্তু এসব হবে না। আগের সরকার তো এরকম কিছু করেনি।’

আইটি সেক্টরে বর্তমান সরকারের উন্নতি তুলে ধরে জয় বলেন, “তথ্য প্রযুক্তিতে আমরা যে বিপ্লব আনার চেষ্টা করছি সেটা কিন্তু পাঁচ বছরে সম্ভব নয়। আমরা একেবারে শূন্য থেকে শুরু করেছি। শুরুর সময় দুটো সমস্যা ছিল। একটা বিদ্যুৎ, আরেকটা কানেকটিভিটি। আমরা সমান্তরালভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। বিদ্যুতের সমস্যা নেই। কানেকটিভিটিও চলে এসেছে, যদিও ব্যান্ডউইডথ কম। কিন্তু পাঁচ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ করা সম্ভব নয়। সময় লাগবে, তবে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি।”

২০০৮ সালে আওয়ামীলীগের দেয়া নির্বাচনী ইশতেহারের অধিকাংশ ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে দাবি করে জয় বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা করেছি, রায়ও পেয়েছি। পাঁচ বছর আগে তাদের বিরুদ্ধে কি একটি মামলাও করা হয়েছিল? আমরা তো বিচার করছি। পদ্মা সেতু আমরা করতে পারিনি। কিন্তু পদ্মা সেতুর কাজ তো এগুচ্ছে, সময় লাগছে। আমরা চালের উৎপাদন বাড়িয়েছি। মঙ্গায় কেউ মারা যায়নি। চাল রপ্তানি হচ্ছে। আমরা যে পরিমাণ বই বিতরণ করেছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছি কোনো সরকার তা পারেনি। বিদ্যুত সমস্যার আমরা সমাধান করেছি। প্রত্যেকটি গ্রামে আমরা স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক করে ফেলেছি। সামাজিক নিরাপত্তা এবং কৃষিতে আমরা উন্নতি করেছি। তাহলে ব্যর্থতা কোথায়?’

টানা কয়েকদিন সংবাদপত্রের শিরোনামে থাকা প্রসঙ্গে জয় বলেন,“আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমার কিন্তু কখনো ক্ষমতায় বসার ইচ্ছা ছিল না। দলে আমার কোনো পোস্ট নেই। আমি সরকারি কোন পোস্টও নেইনি। হঠাত করে এসে ক্ষমতায় বসে পড়ার ইচ্ছাও আমার নাই। সরাসরি আমি এখনো রাজনীতিতে যোগ দেইনি। আমি এসেছি আমার দলকে সহযোগিতা করতে। দেশের জন্য কাজ করার অনেক রকম পদ্ধতি আছে। দলে বা সরকারে পোস্ট নিতে হবে, সেটা কিন্তু সঠিক নয়। আমি সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা ভোটারদের ওপরই নির্ভর করবে। আমি যদি কোনদিন নির্বাচনে দাঁড়াই, আমাকে কিন্তু ভোটের মাধ্যমেই আসতে হবে।”

দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে বিরোধী দলের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে জোর দিয়ে জয় বলেন, “আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে থাকার সময় আমার বোনের বিয়েতে তখনকার প্রধানমন্ত্রীকে দাওয়াত করেছিলাম। তিনি এসেছিলেন, আমি তাকে রিসিভ করে নিয়ে যাই, একসঙ্গে বসে ডিনার করি। উনার ছেলের বিয়েতেও আমাদের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালের পর সব পরিস্থিতি পাল্টে গেল, যখন আমাদের দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হল ও আমার মায়ের ওপর গ্রেনেড হামলা করা হলো। ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা হয়েছিল হাওয়া ভবনে। এটা মুফতি হান্নান বলেছেন”।

বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে জয় বলেন, “বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হবে। এখানে দারিদ্র্য থাকবে না। আমরা যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮,৯,১০ শতাংশে নিয়ে যেতে পারি তাহলে মধ্যম আয়ের দেশ না, উন্নত দেশের মধ্যেও চলে যেতে পারি এবং এটা অসম্ভব না। এটা আপনাদের লাইফ টাইমেই সম্ভব। তবে তার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে”।

এই আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাক্তিগত প্রশ্নেরও খোলামেলা উত্তর দিয়েছেন জয়। স্ত্রী ক্রিস্টিনার সাথে প্রথম পরিচয়ের কথা, প্রিয় খাবার, প্রিয় বই, প্রিয় ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন জয়। জানিয়েছে বাইক চালানোর ব্যাপারে তার দক্ষতার কথাও।

উল্লেখ্য, সজীব ওয়াজেদ জয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর করেছেন পাঁচ বছর আগে। কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে। মাধ্যমিকও পড়েছেন ভারতে। স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওভারমায়ার এবং একমাত্র কন্যা সন্তান সোফিয়া কে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই আইটি পেশায় নিয়োজিত আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আইটি উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অতি সম্প্রতি তিনি দেশে এসেছেন এবং নিয়মিতভাবে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করছেন। সপিরবারে ঘুরে এসেছেন নিজ এলাকা রংপুরের পীরগঞ্জ থেকেও। দেশব্যাপী সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন