রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৩

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনঃ গুরুত্বপূর্ণ দিকসমুহ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আজকের (১৮ই আগস্ট,২০১৩) বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে জাতিকে আরেকটি নতুন সুখবর দিলেন। বাংলাদেশের একসময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল সোনালী আঁশ পাটের দেশী প্রজাতির জীবন রহস্য উদঘাটন করেছেন এদেশের বিজ্ঞানীরা। নিঃসন্দেহে এ এক অভূতপূর্ব অর্জন। বিজ্ঞান ও গবেষণা খাতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার স্পষ্ট নিদর্শন। পাট এখন সম্পূর্ণভাবেই আমাদের সম্পত্তি। আমাদের এই গৌরবের উপলক্ষ্য এনে দেয়ার জন্য আন্তরিক অভিবাদন জানাই ডঃ মাকসুদুল হক ও তাঁর টীমকে। একই সাথে ধন্যবাদ জানাই আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে। কারণ একমাত্র বর্তমান সরকারই এই গবেষণা কাজে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে গেছেন, যা অতীতে আর কেউ দেয়নি। এটা আমার কথা না, স্বয়ং ডঃ মাকসুদুল সাহেব এটা বলেছেন। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানীরাই তোষা প্রজাতির পাটের জীবন রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে সমসাময়িক বেশ কিছু ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। তুলে ধরেছেন এই বর্তমান সরকারের আমলে করা বিভিন্ন উন্নয়নের কথা।

২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহনের সময় বিশ্বব্যাপী বিরাজ করছিল অর্থনৈতিক মন্দা। তারপরও এই সরকারের আমলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে (বর্তমানে মাথাপিছু আয় প্রায় ৯৫০ ডলার), বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, রপ্তানী আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশের বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে ( বর্তমানে ১৬.০৪ বিলিয়ন ডলার)। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র এবারের রোজার ঈদের বাজারেই প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার হাতবদল হয়েছে। দ্রব্যমূল্যও অনেক নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ এই সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহন করে তখন ত্রিশ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। সেই ঘাটতি কাটিয়ে এখন খাদ্য বিদেশেও রপ্তানী করা যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ খাতে অভাবনীয় উন্নতি করেছে এই সরকার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ যখন সরকার গঠন করে তখন দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট। তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার সেটাকে ২০০১ সালের মাঝে ৪৬০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করে। কিন্তু বিএনপি জামাট জোট সরকার এবং তার পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সেটা কমে দাঁড়ায় ৩২০০ মেগাওয়াট। বর্তমান মহাজোট সরকার আবার সেটাকে ৮৬০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। গড়ে এখন প্রতিদিন ৬০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। যার সুফল ভোগ করছেন দেশবাসী। লোডশেডিং নেমে এসেছে ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। নিয়মিত বিদ্যুৎ প্রাপ্তির ফলে কল কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট হচ্ছে ব্যাপকভাবে।

শিক্ষা খাতেও এই সরকারের অবদান ঈর্শনীয়। দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রাসে সোয়া কোটি ছাত্র ছাত্রীকে সরকারী বৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ২২ কোটি বই, যা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে হয়নি।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সরকার। দেশব্যাপী রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কারের পাশাপাশি রাজধানীতে হাতিরঝিল, বনানী ফ্লাইওভার, কুড়িল-বিশ্বরোড ফ্লাইওভার, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের মত আধুনিক স্থাপনা তৈরী করেছে বর্তমান সরকার। পদ্মা সেতুর প্রাথমিক কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রও ইতোমধ্যেই আহবান করা হয়েছে। দেশীয় অর্থায়নেই এই সেতু তৈরি করা হবে।

“ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। ইউনিয়ন লেভেল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে ইন্টারনেট সেবা। সহজলভ্য হয়েছে মোবাইল ফোন। প্রযুক্তির এই উন্নয়নে ঘরে বসেই বিভিন্ন সেবা পাচ্ছেন দেশবাসী।

দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দূর করার কাজও করে যাচ্ছে সরকার। “হাওয়া ভবন” নামক অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে দেশ। ডেসটিনি, হলমার্কের মত দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বিগত জোট সরকারের আমলে এদেশ থেকে পাচার করা টাকা।

শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে সরকার। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এই সরকারের আমলে বিভিন্ন পর্যায়ে ৫৭২৩ টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনে ৬৩৯৪১ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। একটি নির্বাচনেও নূন্যতম দুর্নীতি বা কারচুপি হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন সংবিধানে উল্লেখিত নিয়মেই সামনের জাতীয় নির্বাচন হবে। তাঁর ভাষায়, “ সংবিধানে যেভাবে উল্লেখ আছে সেভাবেই সবকিছু হবে, এথেকে একচুল নড়া হবেনা ”।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংবাদকর্মীদের সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করার অনুরোধ জানিয়েছেন। দেশের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থেই এটা অপরিহার্য।

ডঃ মাকসুদুল আলম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশের জন্য উনার পিতা আত্মত্যাগ করেছেন। সেটাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উনি এবং উনার টীম নিরলস পরিশ্রম করে দেশের কপালে যে গৌরবের তিলক একে দিলেন সেটা জাতি আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

এ পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলনের দুটি বিশেষ ঘটনার দিকে আলোকপাত করতে চাই। ডঃ মাকসুদুল সাহেব বক্তব্য দেয়ার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে মাইক্রোফোন এগিয়ে দিয়েছেন। এই দৃশ্য দেখে আমি খুবই আনন্দিত। তিনি আবারও প্রমাণ করলেন জাতির পিতার যোগ্য কন্যাই হয়েছেন তিনি। এমন প্রধানমন্ত্রীই তো আমরা চাই। যিনি প্রতিনিয়ত জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে সেবা দিয়ে যাবেন তাদের।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছিলেন বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময়ের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে লোডশেডিং দেয়া দরকার। তাহলে মানুষের সেই দুঃশাসনের কথা মনে পড়বে। প্রশ্নোত্তর পর্বে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের খালেদ ভাই বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়া করে আমাদের লোডশেডিং দিবেন না। একটু একটু করে গত সরকারের সব দুর্ভোগ যদি আমাদের পেতে হয় তাহলেও দেশের মানুষের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে। ” নিঃসন্দেহে খালেদ ভাইয়ের এই বক্তব্যই বর্তমান সরকারের সফলতার সুস্পষ্ট নিদর্শন বহন করে।

এবার একটি ব্যাক্তিগত প্রত্যাশার কথা। আমি চাই দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রতিমাসে একবার করে এমন সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করবেন। সরকার দেশের জন্য কি কি করছে তা প্রধানমন্ত্রী নিজে আমাদের জানাবেন। তাহলেই দেশের মানুষ সরকারের কাজ সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানতে পারবে। এতে একদিকে যেমন সরকারের জবাবদিহিতা বাড়বে, সেইসাথে দূর হবে অনেক বিভ্রান্তি।

উন্নয়নের অঙ্গীকার, ধারাবাহিকতা দরকার
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন