শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৩

ভয়াল ১৭ই আগস্ট

আজ সেই ভয়াল ১৭ই আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কালো দিন। দেশকে জঙ্গীবাদী রাস্ট্রে পরিণত করার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৫ সালের এই দিনে দেশের ৬৩ টি জেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থানে একযুগে বোমা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এ বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২ জন, আহত হয়েছিলেন শতাধিক।

মূলত, তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি জামাত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই দেশব্যাপী জঙ্গীবাদের কালো থাবা বিস্তার করতে পেরেছিল জেএমবি। রাজশাহী অঞ্চলে জেএমবি যখন সশস্ত্র মহড়া দিয়ে বেড়াত তখনো তৎকালীন সরকারের কর্তা ব্যাক্তিরা বলেছেন যে, জেএমবি বলতে কোন সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। এটা মিডিয়ার সৃষ্টি। সরকারের এই সহায়তাকে কাজে লাগিয়েই দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে জেএমবি। যার ফলে দেশব্যাপী বোমা হামলা চালানোর মত ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয় তারা।

১৭ই আগস্ট বোমা হামলার পর তৎকালীন জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর স্বীকার করেন যে, বোমা হামলার ঘটনা জেএমবিই ঘটিয়েছে। কিন্তু মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বাবরের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন জামায়াতের দুই এমপি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এবং রিয়াসত আলী বিশ্বাস। সাঈদী তার বক্তব্যে বলেছিলেন, “দেশে একটা পুতুল সরকার স্থাপনের নীল নকশার অংশ হিসাবে এই বোমা হামলা ঘটানো হয়েছে -যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে অবিভক্ত ভারতের অংশ বানানো যায়। বাংলাদেশকে আফগানিস্থান এবং ইরাকের মতো বিদেশী শক্তির আক্রমনের লক্ষ্যস্থল বানানোর নীলনক্সার অংশ হিসাবেই এই বোমা হামলা হয়েছে।”

বিএনপি জামাত জোট সরকারের স্বদিচ্ছার অভাবের কারণেই এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তী এক বছরে দেশে বেশ কয়েকটি বোমা হামলা হয় যার মাঝে আত্মঘাতী বোমা হামলাও ছিল। এসব ঘটনায় বিচারপতি সহ নিহত হন ৩২ জন, আহত হন সহস্রাধিক মানুষ। অবশেষে নিষিদ্ধ হয় জেএমবি। কিন্তু ততদিনে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের নতুন আস্তানা হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। যা এই অভাগা দেশের কপালে যোগ করেছে কলঙ্কের আরেকটি তিলক। এখনও অনেক দেশে ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশী পাসপোর্ট ধারীদের সন্দেহের চোখে দেখা হয়নি। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের নতুন আস্তানা হিসেবে পরিচিত করে তোলার দায় বিএনপি জামায়াত জোটকেই নিতে হবে।

আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ে জঙ্গীবাদের কালো থাবা থেকে দেশ অনেকাংশেই মুক্ত আছে। কিন্তু সম্প্রতি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ বেশি কিছু উগ্রবাদী সংগঠনের নেতা কর্মী গ্রেফতার হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমানিত হয় যে গোপনে গোপনে এখনও জঙ্গিবাদী কার্যক্রম এদেশে চলছে। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে। কিন্তু মূল ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকেই। সকল উগ্রপন্থী জঙ্গী সংগঠনের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুততম সময়ের মাঝে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশ থেকে জঙ্গিবাদকে সমূলে উৎপাটিত করতে হবে। নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে আমরা কেউই চাইনা আমাদের সোনার বাংলা আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের ভাগ্য বরণ করুক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন