শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৩

জয়ের সাক্ষাৎকারঃ নতুন স্বপ্ন ও রাজনীতির দিকনির্দেশনা

গতকাল (পহেলা আগস্ট,২০১৩) রাত আটটায় একাত্তর টেলিভিশনের “একাত্তর সংযোগ” অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে। নানা কারনেই এই সাক্ষাৎকারটি ছিল বহুল আলোচিত। প্রথমবারের মত দেয়া পূর্ণ একটি সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় কি কি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তা জানার জন্য উৎসুক হয়ে ছিল সবাই। বলা যেতে পারে এই সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় রাজনীতির ময়দানে একজন পোড় খাওয়া খেলোয়াড়ের মতই সকলের প্রত্যাশা মেটাতে পেরেছেন। উপস্থাপিকা সামিয়া জামানের প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রাঞ্জল ভাষায়, অত্যন্ত সাবলীলভাবে। বর্তমানে রাজনীতির ময়দানে আলোচিত প্রায় সবগুলো বিষয়ই উঠে এসেছে এই সাক্ষাৎকারে। বিভিন্ন বিষয়ে আওয়ামীলীগের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি সজীব ওয়াজেদ জয় মার্জিত ভাষায় সমালোচনা করেছেন বিএনপি নের্তৃাত্বাধীন আঠারোদলীয় জোটেরও। দেশকে নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা বলেছেন তিনি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও জানিয়েছেন এই সাক্ষাৎকারে।

ঈষৎ পরিমার্জিত আকারে একাত্তর টেলিভিশনে দেয়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলঃ


সামিয়া জামানঃ আজকের একাত্তর সংযোগে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি সামিয়া জামান। আজকে আমরা এমন একজনের মুখোমুখি হচ্ছি যিনি এই মুহূর্তে সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ব্যাক্তিত্ব। আপনারা নিশ্চই বুঝতে পারছেন আমরা বলছি সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং তাঁর বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপদেষ্টা। সজীব ওয়াজেদ জয়, আপনাকে স্বাগত একাত্তর সংযোগ অনুষ্ঠানে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আপনাদেরকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে সুযোগ দেয়ার জন্য।
সামিয়া জামানঃ আপনাকে যে কারনে আমি আলোচিত বলেছি তা হল আপনি সম্প্রতি যুবলীগের একটি ইফতার পার্টিতে বলেছেন যে আপনার কাছে তথ্য আছে আগামীতে আওয়ামীলীগই আবার ক্ষমতায় আসবে। এটি ইতোমধ্যেই বহুল আলোচিত একটি মন্তব্য। বিরোধী দল এবং সরকার দল উভয়ই এর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে অনেক সময় ব্যয় করছেন। আপনি কি আমাদের বলবেন যে কি তথ্যের ভিত্তিতে আপনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ দেখুন সব রাজনৈতিক দলই জরিপ করে। আমরাও নিয়মিত জরিপ করি। আমরা সম্প্রতি দুটি জরিপ করেছি তাতে দেখা যাচ্ছে আওয়ামীলীগ বিএনপি থেকে এগিয়ে আছে। এটা বৈজ্ঞানিক উপায়ে করা এবং বাইরের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীকে দিয়ে করা হয়েছে। অবশ্য এটা নিয়ে বিরোধী দল নানা কথা বলছে, আমার কথাকে ঘুরানোর চেষ্টা করছে। নির্বাচনে কারচুপি করার তাদের যে অভ্যাস সেই অভিযোগ করছে আমাদের বিরুদ্ধে। তবে খেয়াল করে দেখেন আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে গত চার বছরে প্রায় ছয় হাজারটি নির্বাচন হয়েছে। কেউ কিন্তু কোন কারচুপির অভিযোগ তুলতে পারেনি কারণ আওয়ামীলীগ কখনো নির্বাচনে কারচুপি করেনা। আওয়ামীলীগ সবসময় মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষা করতে চেয়েছে। আওয়ামীলীগের কোন ইচ্ছাই নেই নির্বাচনে কারচুপি করার।
সামিয়া জামানঃ তারমানে তারা যে নীল নকশার নির্বাচনের কথা বলছে
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সামিয়া জামানঃ আপনি যে ছয় হাজার নির্বাচনের কথা বলছেন তার মাঝে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচন গুলোতে কিন্তু আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে। সামনের নির্বাচনের আগে অল্প সময়ে এই পরিস্থিতি কিভাবে বদলানোর পরিকল্পনা আছে ?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আসলে পরিস্থিতি পরিবর্তনের কিন্তু সেরকম প্রয়োজন নেই। পাঁচটি নির্বাচন হয়েছে সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে। এখানে জাতীয় ইস্যুর থেকে স্থানীয় ইস্যু গুলোই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। এছাড়াও কিছু কারণ আছে যার জন্য আমরা পরাজিত হয়েছি। এটা আমরা মেনেও নিয়েছি। আমরা যদি জাতীয় পর্যায়ে দেখি সেখানে কিন্তু আওয়ামীলীগ এগিয়ে আছে। এখানে ভোট গ্রহনের হার কিছুটা কম ছিল। জাতীয় নির্বাচনে যেখানে ৮০% এর মত ভোট প্রয়োগ হয় সেখানে এই নির্বাচন গুলোতে ৬০-৬৫% ভোট প্রয়োগ হয়েছে। তাছাড়া জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দেয়া নৌকা অথবা ধানের শীষ প্রতীকে। স্থানীয় নির্বাচনে কিন্তু তারা ভোট দেয় অন্যান্য প্রতীকে। নৌকার আলাদা একটা ব্র্যান্ড ইমেজ আছে। যারা নৌকার ভোটার তারা সবসময়য় নৌকাতেই ভোট দিবে।
সামিয়া জামানঃ আপনি বলছেন যে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় ইস্যুগুলোই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। নির্বাচনে পরবর্তী সময়ে অনেক পর্যবেক্ষকই কিন্তু বলেছেন যে এসব নির্বাচনে জাতীয় ইস্যুগুলোও বেশ ভালো ভূমিকা রেখেছে। এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে অপপ্রচার শব্দটি বহুল ব্যবহৃত হয়েছে। জাতীয় ইস্যুই হোক আর স্থানীয় ইস্যুই হোক, ঠিক কি ধরণের অপপ্রচার আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে হয়েছে বলে আপনি মনে করেন ?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আসলে অনেক গুলো ব্যাপারেই আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। হলমার্ক বলেন, ডেসটিনি বলেন, পদ্মা সেতু বলেন সবগুলো ব্যাপার নিয়েই আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা হচ্ছে।
সামিয়া জামানঃ এগুলো সবই কি অপপ্রচার, সরকারের সময়ে সংগঠিত দুর্নীতির খবর না?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ না, সরকার তো কোথাও দুর্নীতি করেনি। বরং আমরা দুর্নীতি থামিয়েছি, দুর্নীতির মোকাবেলা করেছি। দেখুন ডেসটিনি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানী। তখন থেকেই এতে দুর্নীতি হচ্ছে। বিএনপি আমলেও সেই দুর্নীতি হয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকারই খোঁজে বের করে সেই দুর্নীতি থামিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করেছি, বিএনপি কিন্তু করেনি। আপনি যদি অন্যান্য বিষয়গুলো দেখেন, যেমনঃ পদ্মা সেতু দুর্নীতি- এখানে কিন্তু কোন টাকা লেনদেন হয়নি। অভিযোগ করা হচ্ছে যে দুর্নীতির ইচ্ছা ছিল। আমরা তদন্ত করে যে তথ্য পেয়েছি, যাদের বিরুদ্ধে তথ্য পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
সামিয়া জামানঃ পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে আলোচিত ছিল আবুল হোসেনের নাম। তাঁর বিরুদ্ধে তো কোন মামলা দেয়া হয়নি।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ দেখুন উনার বিরুদ্ধে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আপনি যদি কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে চান তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ লাগবে। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে উনি টাকা চেয়েছেন অথবা উনার এধরণের কোন উদ্দেশ্য ছিল। এ সংক্রান্ত কোন তথ্য, চিঠি বা ই-মেইল কিছুই পাওয়া যায়নি। বলা হচ্ছে যে একটা ডায়েরীতে উনার নাম পাওয়া গিয়েছে। সেই ডায়েরী আজ পর্যন্ত কেউ চোখে দেখেনি। আদৌও এটা আছে কিনা সেটাও কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। তাছাড়া কানাডাতে পদ্মা সেতুর ব্যাপারে যে মামলা চলছে সেটাও আমরা নিয়মিত মনিটর করছি। সেখানে যারা সাক্ষ্য দিচ্ছেন তাদের কেউই কিন্তু আবুল হোসেনের নাম বলেননি। আসলে এটাও আমাদের বিরুদ্ধে একটি অপপ্রচার ছিল।
সামিয়া জামানঃ আপনাদের বিরুদ্ধে যে অপ্রচারগুলো অনেক বেশি কার্যকর হয়েছে তার মাঝে একটি হল গত ৫ই মে হেফাজতের সমাবেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং এতে নিহত মানুষের সংখ্যা। এই ধরণের অপপ্রচারগুলো আপনারা কিভাবে মোকাবেলা করবেন?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ সেদিন রাতে যে অপারেশন হয়েছে তাতে পুরোটা সময় আমরা মিডিয়াকে সাথে রেখেছি। তারা ভিডিও করেছে , ছবি তুলেছে। এই ভিডিও ও ছবি আমরা দেখেছি। যে ধরণের অপপ্রচার হচ্ছে তার কিছুই তখন হয়নি।
সামিয়া জামানঃ সেখানে একাত্তর টেলিভিশনও ছিল। কিন্তু যারা বিশ্বাস করছেন না বা করবেন না তাদের ব্যাপারে কি করবেন ?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ দেখুন এই ব্যাপারটা আমাদের ওভারকাম করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি মানুষ যখন বারবার সত্য ভিডিও গুলো দেখবে তখন তারাই বুঝতে পারবে যে সেখানে কোন হত্যা হয়নি। গুজব রটনাকারীরা হাইতির গণহত্যার ছবিকে ৫ই মের ছবি বলছে। জর্জটাউনে একটি গণ আত্মহত্যা হয়েছিল সেই ছবিকেও তারা ৫ই মের ছবি বলছে। আওয়ামীলীগ এতদিন তৃণমূল পর্যায়ে কোন প্রচারণা চালায়নি। আওয়ামীলীগ এতদিন দেশের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা এতদিন দেশের উন্নয়নের কাজেই নিবেদিত ছিল। এই সরকারের আমলে যে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে তা কিন্তু এমনি এমনি হয়নি। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার ফলেই এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে। বিরোধী দলে থাকলে একটা সুবিধা হচ্ছে ইচ্চামত মিথ্যাচার করা যায়। উনাদের তো আর কোন কাজ নেই। উনারা দেশের কোন কাজ করছেন না, সংসদে আসছেন না।
সামিয়া জামানঃ এটা কি আপনারা যখন বিরোধী দলে থাকেন তখনকার জন্যও প্রযোজ্য?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ না তা ঠিক নয়। আমরা সংসদে গিয়েছি। আমরা জনস্বার্থে অনেকগুলো বিলের এমেন্ডমেন্ট এনেছি। কিন্তু একটি এমেন্ডমেন্টও তারা মানেনি। 
সামিয়া জামানঃ আপনি তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারণার কথা বলছেন। বলছেন যে আওয়ামীলীগ উন্নয়ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সেকাজ ঠিকভাবে করতে পারেনি। তাহলে আপনি কি এই ব্যাপারে কাজ করতে যাচ্ছেন?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ হ্যাঁ, এই ব্যপারে আমার কাজ করার ইচ্ছা আছে। যেহেতু এই ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা আছে। তাছাড়া আমি  বিদেশে থাকি, অনেক অনলাইন এবং মাস কেম্পেইন আমি খুব কাছে থেকে দেখছি। আওয়ামীলীগের যে মনোবল আছে যে, যেসব অনুসারী আছেন এবং নৌকার যে ব্র্যান্ড ভ্যালু আছে সেই সবকিছু নিয়ে আমরা এখনো মাঠে নামিনি। ঐক্যবদ্ধ ভাবে আওয়ামীলীগ যদি মাঠে নামে তখন তাদের হারানো খুবই কঠিন কাজ।
সামিয়া জামানঃ আপনি কি দলের মাঝে কোন অনৈক্যের আভাস পাচ্ছেন ? বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামীলীগের যে সমস্যাগুলো হচ্ছে তাতে কি অনৈক্যের ভূমিকা রয়েছে?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ দেখুন বড় দলে এরকম মাঝে মাঝে হয়। তাছাড়া সরকারের মন্ত্রী এম্পিরা অনেকেই সরকারি কাজে অনেক ব্যস্ত থাকেন। অনেক সময়ই তাদের পক্ষে মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের সাথে সেভাবে যোগাযোগ রাখা হয়ে উঠে না। কিন্তু এসব সমস্যা দূর করার যথেষ্ট সময় আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়েও মাঠে নামব এবং তখন আমাদের হারানো আসলেই কঠিন হবে।
সামিয়া জামানঃ আপনি নির্বাচনের কথা বলছেন। গত বারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ইশতেহার একটি সফল ইশতেহার ছিল। বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং দিন বদলের প্রতিশ্রুতি তরুণ ভোটারদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। সেই ইশতেহার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ কতটুকু সফল হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমাদের ইশতেহারে যতগুলি প্রতিশ্রুতি ছিল তার বেশিরভাগই আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। আমাদের প্রথম ওয়াদাই ছিল আমরা বিদ্যুতের সমস্যা দূর করব। আমার মনে আছে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল যে দেশের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের পথে যাচ্ছিল। তাই দ্রুতই সেই সমস্যা দূর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। 
সামিয়া জামানঃ কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যে কুইক রেন্টাল পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে সে ব্যাপারেও তো অনেক সমালোচনা হয়েছে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ দেখুন উন্নয়ন কাজে ভর্তুকি দেয়া কখনো দুর্নীতি হতে পারেনা। ভর্তুকি তো আমরা বিভিন্ন খাতে দেই, জনগণের স্বার্থেই দিতে হয়। সেই কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট গুলোতে উৎপাদিত বিদ্যুতে কারণেই দেশের অর্থনীতি অনেক এগিয়ে গিয়েছে। একটা প্রাইমারী পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করতে কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগে। আমরা যদি তিন বছরের জন্য বসে থাকতাম তাহলে কল কারখানা গুলোতে উৎপাদন বাড়ত না। দেশের অর্থনীতি গতিশীল হত না। মানুষের আয় বাড়ত না। কুইক রেন্টাল দেয়া ছাড়া আমাদের অন্য কোন উপায় ছিল না।
সামিয়া জামানঃ তারমানে আপনি বলছেন বিদ্যুতে ক্ষেত্রে সরকার সফলতার দাবি করতে পারে। আর কোন কোন ক্ষেত্রে সফলতা রয়েছে?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা সফল। তারপর আপনারা শিক্ষাক্ষেত্রে দেখুন। আমরা কোটি কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। এটা বাংলাদেশ কেন বিশ্বের কোন দেশই পারেনি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেখুন, শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই এই সরকারের আমলেই পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যা আগে কোন সরকার করতে পারেনি। আমরা এক এক করে দেশের সব সমস্যার সমাধান করছি। বিদ্যুৎ সমস্যাটা ছিল দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। আমরা সেটা দূর করেছি। আমরা দুর্নীতি দূর করার জন্য কাজ করেছি। বাংলাদেশে দুর্নীতি আমরা কমিয়েছি। আপনারা যদি গত সরকারের সাথে তুলনা করেন তাহলে দেখতে পাবেন দুর্নীতিতে আমরা তখন কোথায় ছিলাম আর এখন কোথায় আছি। বিএনপি আমলে ভয়াবহ রকমের দুর্নীতি হয়েছে। আমরা সেটা কমিয়েছি।    
সামিয়া জামানঃ আপনার কি মনে হয় বিএনপি সরকারের আমলের দুর্নীতির কথা মানুষের এখনও মনে আছে?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ সেটা হয়ত পুরোপুরি মনে নেই সবার। একারণেই বিএনপি এখনও আশাবাদী আছে যে মানুষ তাদের দুঃশাসনের কথা ভুলে গিয়েছে। দেখুন তারা আমাদের আগে ক্ষমতায় ছিল। তারা এখন বলছে যে আবার ক্ষমতায় গেলে তারা নতুন ধারার কাজ করবে। অথচ তাদের নের্তৃত্বে কিন্তু কোন পরিবর্তন আসেনি। তাদের আমলে যারা দুর্নীতি করেছিল এখনও তারাই তাদের দলের শীর্ষ পর্যায়ে আছে। আপনারা দেখেন, তাদের শাসন আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ান হয়েছিল। এমন কোন সেক্টর ছিল না যেখানে তারা দুর্নীতি করেনি। তাদের দুর্নীতির কারণে কোন ধরণের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। বিদ্যুৎ খাতে তারা এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উতপাদনও বাড়াতে পারেনি শুধুমাত্র তাদের দুর্নীতির কারণে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে নিজেই হাওয়া ভবন খোলে দুর্নীতি করেছে। সিএনজি প্রকল্প থেকে সেখানে টাকা যেত, খাম্বা লিমিটেড তৈরি করে দেশব্যাপী খাম্বা সরবরাহের নামে সেখানে টাকা যেত। এমন কোন ব্যাবসায়ী নাই যাকে হাওয়া ভবনে ডেকে নিয়ে গিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়নি। তার সাথে তুলনা করতে তো কোন সমস্যা নেই। তুলনা তো করতেই হবে। মানুষ ভোট দিবেই আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির মাঝে তুলনা করে। আমরা চাই এই তুলনাটা হোক। ঠিক ভাবে এই তুলনাটা হোক বিএনপির পাঁচ বছরে তারা কি করেছে আর আওয়ামীলীগের পাঁচ বছরে আমরা কি করেছি? আমাদের সময়ে কোন ভবন খোলা হয়নি যেখান থেকে চাঁদাবাজি করা হয়েছে। আমরা সরকারীভাবে মালয়েশিয়ার লোক পাঠাচ্ছি, এখানে যেকোন ধরণের চাঁদাবাজির সুযোগ আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। নিয়মিত হজ্ব ফ্লাইট যাচ্ছে, সেখানে কোন চাঁদাবাজি হচ্ছে না। বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ীও বলতে পারবেন না যে জয়কে চাঁদা দিতে হয়েছে অথবা জয় আমার কাছে চাঁদা দাবি করেছে।
সামিয়া জামানঃ জয় বনাম তারেক এটা নিয়ে অনেক খবর প্রচারিত হচ্ছে প্রতিদিন। আপনি যেহেতু তারেকের দুর্নীতির কথা বলছেন, হাওয়া ভবনের কথা বলছেন তাই আপনাকে কেন্দ্র করে একটি বিকল্প ক্ষমতার বলয় গড়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে। এই আশঙ্কা কি সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ সেটার প্রমাণ তো অলরেডি পেয়েই গেছেন আপনারা। আওয়ামীলীগ তো সাড়ে চার বছর ক্ষমতায় ছিল। এই সময়ে আমি কি এমন কিছু করেছি? আমার মা দুইবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তারেক রহমানের মাও দুইবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমি কি করেছি আর তারেক রহমান কি করেছে আপনারা তা ভালো করেই জানেন। যা আমি বারবার বলে এসেছি, আমাদের পরিবারের সবাই শিক্ষার উপর জোড় দিয়েছে। আমাদের দেশের টাকা, দেশের সম্পদ মেড়ে খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা ভালো আছি। বিএনপির ক্ষেত্রে দেখেন তাদের আমলে তারা কি করেছে? এটাই তো প্রমাণ।
সামিয়া জামানঃ সাম্প্রতিক সময়ে আপনি বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে যাচ্ছেন, রাজনীতি নিয়ে কথা বলছেন। এটা ঠিক কোন প্রেক্ষাপটে করছেন? আপনি কি রাজনীতিতে আসছেন?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন প্রচারণা চালানোর সময়। আমি এসেছি আমার দলকে সহায়তা করতে। আমার নিজের পক্ষে যতটুকু সম্ভব সেটা আমাকে করতেই হবে। আমি ক্ষমতা বা টাকার দিকে নজর দিতে আসিনি। সেটা যদি হত তাহলে আমি তো সাড়ে চার বছর আগেই আসতে পারতাম। তা আমি করিনি। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের মানুষকে আমার কথাটা জানানো। এই যে আপনি আমার সাথে কথা বলছেন, এই সুযোগটা কিন্তু সবাই পায়না। আমার ফেসবুকের একটি ছবি চার পাঁচ লক্ষ মানুষ দেখেছে দুইদিনে। এই সুযোগটাই আমি কাজে লাগাতে চাই।

সামিয়া জামানঃ হ্যাঁ সেই ছবিটা আমরা সবাই দেখছি। আপনি আপনার জন্মদিনের দিন একটি ফেসবুক পেজ খুলেছেন এবং পারিবারিক আবহের একটি ছবি দিয়েছেন যেখানে দেখা যাচ্ছে আপনার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার জন্য রান্না করছেন। এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কি আপনি সবার সাথে যোগাযোগ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন অথবা এই ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে চাচ্ছেন?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ এই দিকটায় অবশ্যই নজর দিচ্ছি। কারণ বার্তা পৌছানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, বিশেষ করে তরুণদের কাছে। এই দিকটা আমি অবশ্যই খেয়াল রাখব। তাছাড়া অন্যান্য যেসব মাধ্যম রয়েছে সেগুলোও ব্যাবহার করব।
সামিয়া জামানঃ আপনি কি আনন্দিত যে এত অল্প সময়ে এত বিপুল পরিমাণ মানুষ আপনার পেজ দেখেছে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমি আসলেই আনন্দিত। আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে অল্প সময়ে এত বিপুল সাড়া পাব। আমি একজন মডারেটরও ঠিক করেছি যে এখন থেকে আমার পোস্টগুলো ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দিবে। আমরা দলের পক্ষ থেকেও সোশ্যাল মিডিয়া তে অনেক একটিভ হব।  
সামিয়া জামানঃ আগে থেকেই আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী অনলাইনে বেশ একটিভ ছিলেন। তারপরও  একটা দীর্ঘ সময় ইউটিউব বন্ধ ছিল। সেইসাথে ফেসবুকে লিখালিখি ব্যাপারেও অতিরিক্ত নজরদারির একটা অভিযোগ আছে। এই ব্যাপারে তরুণ সমাজের একটা ক্ষোভও রয়েছে। এই বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ এটা কিন্তু আমরা সরাসরি ব্লক করতে চাইনি। এব্যাপার গুলো নিয়ে বিটিআরসি বারবার ইউটিউব ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে। আপনারা জানেন আমেরিকায় তৈরী ইসলাম ধর্মের প্রতি উস্কানীমূলক ভিডিওচিত্রের প্রচারের কারণে মুসলিম দেশগুলোতে বেশ ভায়োলেন্স চলেছে। এই ঘটনা বাংলাদেশে যেন না হয় সেকারনে এই ভিডিও সরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা ইউটিউবে যোগাযোগ করেছি। একই ভাবে ফেসবুকে ধর্মকে অবমাননা করে যখন কিছু পোস্ট দেয়া হয়েছে তখন সেগুলো সরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা ঠিকভাবে কো অপারেট না করার কারণেই আমাদের পুরো সাইটটা ব্লক করতে হয়েছে। তারপর ফেসবুক এবং ইউটিউব কর্তৃপক্ষ যখন আমাদের কো অপারেট করতে শুরু করল তখন কিন্তু আমরা ব্লক উঠিয়ে নিয়েছে। এগুলো ব্লক করে রাখার ইচ্ছা কখনোই আমাদের ছিলনা।
সামিয়া জামানঃ উত্তরাধিকার রাজনীতিতে একটি বিশেষ সুযোগ যেটি আপনি নিজেও স্বীকার করলেন যে অন্য যে কারোর তুলনায় আপনার কথা শুনতেই আমরা বেশি আগ্রহী। এই বিষয়টিকে সাধারণত নেগেটিভলিই দেখা হয়।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আসলে এটা ডিপেন্ড করে সম্পূর্ণ ভাবে মেধার উপর, যোগ্যতার উপর। আমি কার ছেলে সেটা বড় কথা নয়। আমি প্রথমেই বলে নেই যে, রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে আমার তেমন আগ্রহ কখনোই ছিল না। আমি বাধ্য হয়েই আসি যখন আমার মায়ের উপর ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়, আমাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সাহেবের স্ত্রীসহ আরও অনেককে হত্যা করা হয়। তখন আমার মাঝে একটা জেদ চেপেছিল যে বিএনপির মত ভয়ংকর একটা দলের হাত থেকে আমি আমার দেশকে রক্ষা করব, আমার দলকে রক্ষা করব। এখনও আমি এসেছি শুধুমাত্র আমার দলকে সহযোগিতা করতে। আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে ছয় মাস যথেষ্ট সময় কিনা? আমি বলব ছয় মাসই যথেষ্ট সময়। আমার এখনকার চিন্তা হল সামনের নির্বাচনে আমার দলকে জিতাতে হবে। আমাদের দলের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করা হয়েছে সেটা আমি মোকাবেলা করতে চাই। সেটা করতেই আমি এসেছি এবং আমি বিশ্বাস করি এটা আমি করতে পারব। উত্তরাধিকারের কথা যদি বলেন সেখানেও যোগ্যতার ব্যাপার রয়েছে। আপনারা দেখেন ডাক্তারের ছেলে অনেক সময়ই ডাক্তার হয়, আইনজীবীর ছেলেও সাধারণত আইনজীবীই হয়। আমরা যারা রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছি তারা রাজনৈতিক বিষয় গুলো খুব কাছে থেকে দেখেছি। আমি তো ১৯৮২ সাল থেকে দেখছি। কিভাবে গণতন্ত্র আরম্ভ হল, নির্বাচন হল, সরকারে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কিভাবে নেয়া হয় সেগুলো দেখেছি। আমি বলব আমরা যারা রাজনৈতিক পরিবারে বড় হয়েছি তাদের রাজনীতির উপর একটা ইন্টার্নশিপ হয়েছে। এই সুযোগ কিন্তু বেশিরভাগ মানুষেরই নেই। তারপরও শেষ পর্যন্ত সবকিছু নির্ভর করে মেধার উপর। সবাই পারেনা। সবার সেই সামর্থ্য নেই। যাদের চরিত্রে স্বচ্ছতা আছে তারা সৎ কাজ করবে। যাদের চরিত্রে দুর্নীতি আছে তারা সবসময় দুর্নীতিই করবে। মানুষ চরিত্র বদলাতে পারেনা।
সামিয়া জামানঃ আপনি রাজনীতিতে ব্যক্তি চরিত্রের প্রভাবের কথা বলছেন। সেই সাথে নির্বাচনকালীন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে জনগণের সামনে নিজেদের উপস্থাপন করে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। আপনারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে দিন বদলের কথা বলেছিলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলেন এবং সেটি ব্যাপকভাবে গৃহীতও হয়েছিল। বিএনপি এরই মাঝে নতুন ধারার রাজনীতি নামক একটি শ্লোগান নিয়ে তাদের কাজ শুরু করেছে। আপনাদের শ্লোগান এবার কি হবে?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমাদের শ্লোগান এখনও ফাইনাল হয়নি। আমাদের মেইন থীমটা হবে যে আমরা অনেক এগিয়ে এসেছি, আমরা এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে চাই। আমরা পিছিয়ে যেতে চাইনা। গত বিএনপি সরকারের আমলে দেশের অবস্থা যা ছিল সেই অবস্থায় আমরা আর ফিরে যেতে চাইনা। তখন অবিশ্বাস্য রকমের দুর্নীতি হয়েছে, সন্ত্রাস হয়েছে, দেশব্যাপী জঙ্গি হামলা হয়েছে, সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা নিজেই দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান করেছে সন্ত্রাসীদের জন্য, আমার মাকে হত্যার উদ্দেশ্যে যে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল তাতে তখনকার প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তারেক রহমান নিজেই জড়িত ছিলেন বলে মুফতি হান্নান সাক্ষ্য দিয়েছে। আমরা এইরকম পরিস্থিতিতে আর ফিরে যেতে চাইনা। আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এটা ঠিক আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, তুলনা করে দেখেন আমরা কোথা থেকে কোথায় এসেছি। দেশের সব সমস্যা দূর করতে, দেশকে আধুনিক একটা দেশে পরিণত করতে আমাদের সময় লাগবে। আমরা পাঁচবছরে অনেক দূর এগিয়ে এসেছি এবং এভাবেই এগিয়ে যেতে চাই। আমরা অন্ধকারে ফিরে যেতে চাইনা।
সামিয়া জামানঃ আওয়ামীলীগ যে সফলতা গুলো দাবি করে তার মাঝে অন্যতম হল যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যা এখন চলছে। এই বিচারের রায় এবং তা কার্যকর হওয়া না হওয়া- সামনের নির্বাচনে সামনের নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব রাখবে বলে আপনি মনে করেন?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমি মনে করি এটার একটা মারাত্মক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশের মানুষ ৪২ বছর অপেক্ষা করেছে এই বিচারের জন্য। আমরা চেয়েছি যে বিচার নিয়ে কারও মনে যেন কোন সন্দেহ না থাকে। তাই আমরা সময় নিয়ে স্বচ্ছতার সাথে এই বিচার করছি। আইনগত ভাবে সবকিছু করতে কিছুটা সময় লাগে। সেভাবেই আমরা করছি। আমাদের যা ওয়াদা ছিল সেটা আমরা পূরণ করছি, সম্পূর্ণ পূরণ করার ইচ্ছা আছে।
সামিয়া জামানঃ এই বিচার নিয়েও কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে অনেক আলোচনা হয়েছে। অনেক বড় ধরণের প্রচারণার চালানোর চেষ্টাও করা হয়েছে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ দেখুন আমাদের এই বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে কোন দেশ এখন পর্যন্ত প্রশ্ন তোলতে পারেনি, কেউ বলতে পারেনি এখানে ফ্রী এন্ড ফেয়ার বিচার হচ্ছে না। অনেকেই এখানে এসে বিচারের প্রক্রিয়া দেখে গিয়েছেন এবং সবাই এটা নিয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় যে আমাদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের সাথে হাত মিলিয় বিদেশে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে তাদের পক্ষে লবিং করিয়েছে। যারা আমাদের দেশের মানুষকে হত্যা করেছে, নিজেদের ভাইবোনকে হত্যা করেছে, নিজেদের মা-বোনকে ধর্ষণ করেছে তাদের পক্ষ নিয়ে বিএনপি তাদের সুরে কথা বলছে। একজন আওয়ামীলীগ কর্মী হিসেবে না, বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এটা আমার কাছে আশ্চর্য জনক মনে হয়। এটা তো জাতীয় ইস্যু। যারা আমাদের দেশের বিরোধিতা করছে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের পক্ষে কথা বলা তো রাষ্ট্রের বিরোধীতা করারই সামিল। দেশের প্রতি তো তাদের কোন ভালোবাসা দেখছি না। একমাত্র আওয়ামীলীগ সরকারই এই বিচারটা করছে। বিএনপি কি করেছে ? তারা এই যুদ্ধাপরাধীদের কে দেশে ফিরিয়ে এনেছে, তাদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়ে তাদের মন্ত্রী বানিয়েছে। এটা আমার কল্পনা করতেও কস্ট হয়, কিভাবে এটা তারা করতে পারল?
সামিয়া জামানঃ যুদ্ধাপরাধের মত একটা জাতীয় ইস্যুতেও সরকার দল ও বিরোধীদল একমত হতে পারছে না।  যে নির্বাচন নিয়ে এত কথা হচ্ছে সেই নির্বাচনের ব্যাপারেও তো দুই পক্ষ দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার- ঠিক কোন সরকারের অধীনে সামনের নির্বাচন হবে বলে আপনি মনে করছেন ?

সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে, সেটা কোন সরকারের অধীনেই হবেনা। আমরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছি, শক্তিশালী করে দিয়েছি। বিশ্বের সব দেশেই নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন পরিচালনা করে। কথা হচ্ছে সেসময় দেশ কোন সরকার চালাবে। আমরা বিরোধী দলকে প্রস্তাব করেছি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার জন্য। কারণ উচ্চ আদালতে রায়ের পর অনির্বাচিত কাউকে ক্ষমতা দেয়ার সুযোগই নেই। আমাদের সংবিধানেই আছে ‘বাংলাদেশ ইজ এ ডেমোক্রেট রিপাবলিক পার্টি গোভর্নড বাই ইলেকটেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অব পিপল।’ এখানে অনির্বাচিত কারও হাতে ক্ষমতা দেয়া অসাংবিধানিক। তাছাড়া অনির্বাচিত সরকারের অভিজ্ঞতাও তো আমাদের আছে। আমরা দেখেছি গত দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কি হয়েছে। বিএনপি পরবর্তী তত্তআবধায়ক সরকারের আমলেই কি একটি অবাধ নির্বাচন হতে যাচ্ছিল ? ২০০৬ সালে বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ সাতটি ধাপ অতিক্রম করে নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপির তৈরী করা ১ কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার সহ ভোটার তালিকা দিয়ে সাজানো নির্বাচন করতে যাচ্ছিল। তাহলে তত্ত্বাবধায়ক দিয়ে লাভটা কি হল? বরং এই সুযোগ টা নিল সামরিক শক্তি। ক্ষমতা দখল করে দুইবছর দেশ শাসন করল। সব রাজনীতিবিদদের জেলে ঢুকালো, নির্যাতন করল।
সামিয়া জামানঃ কিন্তু আওয়ামীলীগ তো সামরিক সহায়ত পুষ্ট সেই তত্তাবধায়ক সরকারকে প্রথমে সাধুবাদ জানিয়েছিল। তাদের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানেও গিয়েছিল।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমরা গিয়েছিলাম কারণ আমরা আশা করেছিলাম যে তারা সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মাঝেই নির্বাচন দিবে। তারা তো সেটা করেনি। তারা দুই বছর থেকেছে। এটাই তো আমাদের ভয়। এখন আমরা যদি একটা অনির্বাচিত সরকার আনি এবং তারা যদি ৯০ দিনের কথা বলে ১০ বছর থাকে তখন আমরা কি করব ?
সামিয়া জামানঃ এই ধরণের আশঙ্কার কথা প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বলেছেন। কিন্তু এর পরিবর্তে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিকল্প অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রুপরেখা নিয়ে আওয়ামীলীগ কি বিএনপির সাথে  কার্যকর কোন আলোচনা করছে নাকি দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় আছে?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমরা তো দেখতে পাচ্ছি যে বিএনপিই অনড় হয়ে বসে আছে। আমরা যখনই যে প্রস্তাব দিচ্ছি তারা সেটাই প্রত্যাখ্যান করছে। তারা চাচ্ছেই রাজপথে আন্দোলন করতে, ভাংচুর করতে। এটা ছাড়া তারা সন্তুষ্ট হবেনা। এখন আমাদের বিশ্বাস আমরা যাই প্রস্তাব করি তারা তা মানবে না। আমাদের কথা হচ্ছে আমাদের সময়ে যে ছয় হাজারের মত নির্বাচন হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে বিএনপিও বলতে পারবে না যে কারচুপি হয়েছে বা সরকার নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। সবাই এর প্রশংসা করেছে। আমার মনে হয় বিএনপিই মানুষের মাঝে এব্যাপারে একটা ভয় বা আতংক তৈরী করার চেষ্টা করছে। শেষ পর্যন্ত তারা ঠিকই নির্বাচনে যাবে। এর আগেও বিভিন্ন সময় তারা নির্বাচনে যাবে না বলে পরবর্তীতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
সামিয়া জামানঃ বিএনপি স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচনের পার্থক্যের কথা বলছে। একই সাথে ৩০০ টি আসনের নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মিডিয়ার উপস্থিতি ছাড়াও অন্যান্য অনুঘটক যা নির্বাচনকে অবাধ করতে সহায়তা করে সেগুলো নিশ্চিত করা সম্ভব না বলে মনে করছে বিরোধী দল। এটি শুধু বিরোধী দল নয়, সুশীল সমাজের একটি অংশও কিন্তু এটাই মনে করছে। এই ব্যাপারে আপনি কি বলবেন ?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সেটা স্থানীয়ই হোক আর জাতীয় নির্বাচনই হোক তেমন কোন পার্থক্য নেই। এটা সম্পূর্ণ রুপে নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনের উপর। এখানেও আবার সেই চরিত্রের কথাই ফিরে আসে। বিএনপি সবসময়ই নির্বাচনে কারচুপি করে অভ্যস্ত। হ্যাঁ, বিএনপির অধীনে কোন অবাধ নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। ৯৬ এর নির্বাচনে তারা কারচুপি করেছে। মাগুরার উপনির্বাচনে কারচুপি করেছে, ঢাক-১০ আসনের উপনির্বাচনে কারচুপি করেছে, ২০০৬ সালের নির্বাচনের ভোটার তালিকায় তারা ১ কোটি ৪০ লক্ষ ভূয়া ভোটার এর নাম ঢুকিয়ে সাজানো নির্বাচন করতে চেয়েছে। আওয়ামীলীগের কিন্তু সেই চরিত্র নেই। আওয়ামীলীগ কখনো নির্বাচনে কারচুপি করেনি। কোনদিন করেনি। আওয়ামীলীগ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার এর জন্য লড়াই করেছে, সেটা আদায় করেছে। এটা আওয়ামীলীগের চরিত্র। আর সুশীল সমাজের অনেকে হয়ত ভেবেছে আরেকবার তত্ত্বাবধায়ক আসলে হয়ত তারাই অনেকদিন দেশ চালাবে। ‘গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল কন্সেসেস’ মত কিছু একটা করে নিজেরা ক্ষমতায় বসবে।
সামিয়া জামানঃ সেই আভাস তো এখনও আছে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধান দুই জোট যদি সমঝোতায় না আসতে পারে তাহলে সেই আশঙ্কা তো থেকেই যায়।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ এখানেই তো ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সুশীল সমাজের একটা অংশ হয়ত চাচ্ছেই অনির্বাচিত দের হাতে ক্ষমতা যাক এবং তাহলেই হয়ত তারা ১/১১ এর মত একটা পরিস্থিতি তৈরি করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে। তখন দেশের কি অবস্থা হবে? এটাই আমাদের ভয়।
সামিয়া জামানঃ আমরা এবার সামনের দিকে দৃষ্টি দেই। আমাদের অনুষ্ঠানও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবার তরুণ ভোটারদের সংখ্যা আরও বেড়েছে। আপনি তাদের জন্য কি ধরণের নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন ?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমরা একটা ভিশন দিয়েছি, ভিশন ২০২১। বিগত সাড়ে চার বছরে আমরা সেই ভিশনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ অর্জন করেছি। কাজ অনেক হয়েছে এবং আরও কাজ বাকি আছে। আমরা উন্নতির এই ধারা ধরে রাখতে চাই। আমরা যখন ক্ষমতা গ্রহন করি তখন মাথাপিছু আয় ছিল ৬০০ মার্কিন ডলার, বিগত সাড়ে চার বছরে সেটা বেড়ে প্রায় ১০০০ ডলার হয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশ হবে একটি দারিদ্র্য মুক্ত দেশ। বিগত সাড়ে চার বছরে দারিদ্রের হার দশ শতাংশ কমেছে। মানে প্রায় দেড় কোটি মানুষ দারিদ্র্য মুক্ত হয়েছে এই সময়ে। এই সরকারের শাসনামলে আমরা যে পরিমাণ কাজ করেছি তা যদি পরবর্তী ৫-১০ বছর করা যায় তাহলে আমরা দেশের চেহারা পাল্টে দিতে পারব, বাংলাদেশ হবে একটি আধুনিক দেশ। আমরা ইতোমধ্যেই দেশের চেহারা অনেক পরিবর্তন করেছি। আপনি হাতির ঝিল দেখেন, ঢাকা শহরের ফ্লাইওভার গুলো দেখেন সবই উন্নত দেশের মত করে তৈরী করা হয়েছে। আমাদের নতুন ট্রেন দেখেন, নতুন বিমানগুলো দেখেন। আমরা নতুন পোর্ট করছি, নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, নতুন নতুন কল কারখানা হচ্ছে। একটি আধুনিক দেশ গড়ে তোলাই আমাদের একমাত্র স্বপ্ন। আমার বিশ্বাস শুধুমাত্র আওয়ামীলীগই এটা করতে পারবে, আর কেঊ পারবে না।
সামিয়া জামানঃ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি বলে আপনি মনে করেন?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দারিদ্র্যতা। আওয়ামীলীগ যখন সরকার গঠন করে তখন সাড়ে চারকোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে ছিল। আমরা সেটা কমিয়ে তিন কোটিতে নামিয়ে এনেছি। আমরা যখন দারিদ্র্য দূর করতে পারব, যখন মানুষের ইনকাম বাড়বে তখন কিন্তু তারা এদেশের ইকোনমিতেই খরচ করবে। ফলে ইকোনমি হয়ে উঠবে কনজ্যুমার ড্রিভেন ইকোনমি। উন্নয়নের জন্য এটা দরকার। যেহেতু আমাদের লোকসংখ্যার অভাব নেই। তাই সবার ইনকাম বাড়লে আমাদের ইকোনমির গ্রোথ অনেক দ্রুততর হবে। তাতে আমরা সবাই লাভবান হব।     
সামিয়া জামানঃ দারিদ্র্য বিমোচন তো একটি দীর্ঘ মেয়াদী কাজ কিন্তু ইমিডিয়েট সামনের কিছু ব্যাপার আছে যেমন হেফাজতের অতি ধর্মীয় রক্ষনশীলতার তের দফা, মানবতাবিরোধীদের শাস্তির রায় কার্যকর ইত্যাদি। এর মাঝে কোনটিকে আপনি দেশের জন্য বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছে?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ ধর্ম নিয়ে আমাদের ব্যাপারে যে অপপ্রচার চলছে সেটা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আওয়ামীলীগ বাঙ্গালী মানুষের জন্য আছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান ,আমরাও মুসলমান। কিন্তু আমাদের হিন্দু ভাইয়েরাও আছেন, খ্রিস্টান ভাইয়েরা আছেন, বৌদ্ধ ভাইয়েরা আছেন। তাদেরকে তো আমরা বাদ দিতে পারিনা। আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে বাঙ্গালী জাতির জন্য কাজ করতে চাই। আমরা ধর্মের জন্য কাউকে বাদ দিতে চাইনা। তবে আমাদের যারা বিরোধী তারা আমাদের নামে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ ব্যাপারগুলোই এখন সবাইকে বোঝাতে হবে, বাস্তব কথাগুলো তাদের জানাতে হবে। আমার মা অত্যন্ত ধার্মিক একজন মানুষ। তিনি প্রতিদিন ভোরবেলা উঠে ফজরের নাম পড়েন, চা খান, তারপর কোরআন শরীফ পাঠ করেন। আমার মা এটা প্রতিদিন করেন, পৃথিবীর যে দেশেই থাকুন না কেন। আর এর বিপরীতে আমরা যদি বিরোধীদলীয় নেত্রীকে দেখি উনাকে যখন ক্যান্টনমেন্ট এর বাসা ছাড়তে হল তখন সেই বাসার অনেক কিছুই আমরা টিভিতে দেখেছি। আমি বাংলাদেশের মানুষেরদের বলব, আপনারাই বিচার করুন কারা ধার্মিক আর কারা নাস্তিক। মিথ্যা কথা চাইলেই বলা যায়, অপপ্রচার চাইলেই করা যায়। আপনারাই বিচার করে দেখেন কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।
সামিয়া জামানঃ  বিশেষ যে ভৌগলিক অবস্থানে বাংলাদেশ রয়েছে এবং ভবিষ্যৎ সাউথ সেন্টারড বিশ্বের প্রেক্ষাপটে আপনি বাংলাদেশের  এই অবস্থানকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আমার নানা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একটা স্বপ্ন ছিল যে বাংলাদেশ সাউথ এশিয়ার সুইজারল্যান্ডের মত হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় যত বিনিয়োগ হয়, যত ট্রেড হয়, যত কমিউনিকেশন হয় বাংলাদেশ তার একটা হাব হয়ে দাঁড়াবে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এশিয়ান হাইওয়ের সাথে কানেক্ট হয়েছি, তিনটি ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ভারতে সাথে আমাদের টেলিযোগাযোগের কানেক্টিভিটি চলে এসেছে। আমরা চট্টগ্রাম পোর্ট টাকে সম্প্রসারণ করছি। কারণ আমাদের আশা আছে চীন, নেপাল, ভূটান এমনকি ভারতের পণ্যও আমাদের পোর্ট দিয়ে যাবে। এতে কিন্তু আমরাই লাভবান হব। মায়ানমারের কাছ থেকে আমরা সমুদ্রসীমা জয় করেছি। আগামীবার ক্ষমতায় আসতে পারলে ভারতের কাছ থেকেও আমরা সমুদ্রসীমা জয় করে আনব। একমাত্র আওয়ামীলীগ ফিরে আসলেই এই কাজগুলো হবে। তখন বঙ্গোপসাগরে আমাদের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে আন্তর্জাতিক শীপিং কে আমরা বাংলাদেশে নিয়ে আসব। তখন বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে সাউথ এশিয়া তথা এশিয়ার একটি হাব হয়ে দাঁড়াবে।
 সামিয়া জামানঃ সজীব ওয়াজেদ জয় আপনাকে অনেক ধন্যবাদ একাত্তর টিভির পক্ষ থেকে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। একাত্তর টেলিভিশনকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকারের ইউটিউব লিঙ্কঃ http://www.youtube.com/watch?v=ETOzN8l9J0M

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন