বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

বিএনপিঃ একটি ‘পরজীবী’ সংগঠনের নাম



বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, সংক্ষেপে বিএনপি। সামরিক সহায়তায় সেনানীবাসের ভিতরে দলটির জন্ম হয়েছিল। এর গঠনতন্ত্র লিখা হয়েছিল কলমের কালিতে নয়, বন্দুকের বেয়নেট দিয়ে। যে দলের আঁতুড় ঘর হল ক্যান্টনমেন্ট এবং ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল, সে দল কখনোই একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনা। বিএনপিও পারেনি। জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি তাই অন্যের উপর নির্ভর করেই টিকে আছে। প্রয়োজন মত অনেককেই ব্যবহার করেছে আবার প্রয়োজন শেষ হলে ছুড়েও ফেলে দিয়েছে। সবসময় অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে তারা শিকার করেছে। কিন্তু একটি স্বকীয় রাজনৈতিক আদর্শ বা কাঠামো গড়ে তোলতে পারেনি তারা। দলটির নেতাকর্মীরা ‘শহীদ জিয়ার আদর্শ’ নামক একটা টার্ম ব্যবহার করে। কিন্তু কেউই জানেনা এটা কি? দেশ বা গণতন্ত্রের জন্য নয় বরং নিজেদের স্বার্থেই পরজীবীর মত টিকে আছে বিএনপি নামক দলটি। 


সুযোগ্য এবং বিচক্ষন নেতৃত্বের মাধ্যমে বাঙালি কে একটি নতুন স্বাধীন দেশ এনে দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ দেশটির জন্মের মাত্র চার বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সূর্যটি ঢাকা পড়ে পরাধীনতার কালো মেঘে। এই হত্যাকান্ডে পরোক্ষ ভূমিকা ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের। মূলত এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়েই বিএনপির জন্ম নেয়ার পথ সুগম হয়। কারণ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে মেজর জিয়া কখনোই রাষ্ট্রক্ষমতায় বসার সুযোগ পেতেন না এবং বিএনপি নামক দলেরও জন্ম হত না। এই হত্যাকাণ্ডের পর পরই ক্ষমতা লাভ করেননি মেজর জিয়া। কর্নেল তাহের কথিত সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসান জিয়াউর রহমানকে। এর প্রতিদান দিতে বিন্দুমাত্রও দেরি করেননি মেজর জিয়া। সামরিক আদালতের রায়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দেন কর্নেল তাহেরকে। নিজের চলার পথকে করেন কাটামুক্ত।

সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থাতেই কিছু দলছুট ও স্বার্থলোভী মানুষের সমন্বয়ে গড়ে তোলেন বিএনপি। এই দলটির শ্লোগান ভাড়া করে আনা হয় পাকিস্তান থেকে। পাকিস্তান জিন্দাবাদ এর সাথে মিলিয়ে রাখা হয় বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। দলটির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করার জন্য বৈধতা দেয়া হয় যুদ্ধাপরাধী দল জামায়তে ইসলামকে। পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনা হয় জামায়াতের আমীর গোলাম আজমকে। মেজর জিয়া নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি না করলেও তার দলের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে এবং নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল হিসেবে জাহির করার জন্য জিয়াউর রহমান কে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে। সত্যিই সেলুকাস কি বিচিত্র এই বিএনপি।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দৃশ্যপটে আসেন তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার পুঁজি ছিল ‘ভাঙ্গা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জীর গল্প’। এই গল্পকে সম্বল করে করুনা আদায় করেন তিনি। সরকারি টাকায় বাড়ি গাড়ি বাগিয়ে নিয়ে সেনানীবাসের ভিতরেই বাস করতে থাকেন তার দুই ছেলে তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমানকে নিয়ে। ৯০ এর গনঅভ্যুত্থান কে পুঁজি করে আপোষহীন নেত্রীর লেবাশ গায়ে জড়িয়ে ক্ষমতার মসনদে বসেন তিনি। কিন্তু নিজের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে প্রতিনিয়ত তিনি আপোষ করেছেন যার তার সাথে। ২০০১ সালে পুনরায় ক্ষমতার আসার জন্য আঁতাত করেন জামায়াতে ইসলামের সাথে। গড়ে তোলেন চারদলীয় ঐক্যজোট। মৌলবাদী অপশক্তিকে সাথে নিয়ে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় বসেন খালেদা জিয়া। এবার দৃশ্যপটে আসে তার ছেলে তারেক রহমান। দেশটাকে নিজের ব্যাক্তিগত সম্পত্তি মনে করে দুর্নীতি আর কালোবাজারির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে তারেক জিয়ার নেতৃত্বাধীন ‘হাওয়া ভবন’ গং। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত নিজেদের দুঃশাসন কে ঢাকতে একের পর এক হত্যা আর নির্যাতন চালায় তারা বিরোধীদলীয় নেতা কর্মীদের উপর। ৫ বছরের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধ কেউই রেহাই পায়নি তাদের হায়েনারুপী হিংস্র থাবা থেকে। এমনকি জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কে হত্যা করার জন্যও গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এসব কিছুই তারা করেছে দেশটাকে কুক্ষিগত করতে। চিরস্থায়ী ভোগবিলাসের ব্যবস্থা করতে।

বর্তমানে ফিরে আসা যাক। ২০০৮ সালে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে তিন চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। বিএনপি রুপান্তরিত হয়ে কাগুজে বাঘে। রাজপথে রাজনৈতিক কাজে তাদের তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায়নি। বরং সবক্ষেত্রেই তারা নির্ভরশীল হয়ে পড়ে জোটসঙ্গী জামায়াতের উপর। মাঝে মাঝে কিছু হরতাল তারা দিয়েছে কিন্তু হরতাল দিয়ে নিজেরাই রাজপথে নামেনি। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি নিয়ে শাহাবাগে যখন ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ গড়ে উঠে তখন বিএনপি এর অনুকরণ করে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ তৈরির ঘোষণা দেয়, যদিও তা বাস্তবে রুপ নেয়নি। তথাকথিত নাস্তিক ইস্যু নিয়ে হেফাজত ইসলাম যখন মাঠে নামে তখন বিএনপির পালে যেন নতুন করে হাওয়া লাগে। হেফাজতে ইসলামের ৫ই মের ঢাকা অবরোধ আশাবাদী করে তোলে তাদের। খালেদা জিয়া ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন সরকারকে। কিন্তু হেফাজতের অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার সাথে সাথে বিএনপির কূটকৌশলও নস্যাৎ হয়ে যায়। অবশ্য এখনো বিএনপি তথাকথিত নাস্তিক ইস্যু এবং হেফাজতের সমাবেশের কথিত গণহত্যা ইস্যুকে পুঁজি করেই ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। রাজনৈতিক ভাবে কতটা দেওলিয়া হলে একটি দল সবসময় অন্যের উপর ভর করে, অন্যের আইডিয়া ধার করে তাদের রাজনীতি চালিয়ে যেতে পারে তা বিএনপিকে না দেখলে বুঝা যেত না।

সাম্প্রতিক একটা ঘটনা দিয়ে লিখাটা শেষ করছি। গত ১৮ই আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলন আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, “ সংবিধানে যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই নির্বাচন হবে। এ থেকে একচুলও নড়া হবেনা।” স্থির সিদ্ধান্ত বুঝাতে ‘এক চুল নড়া হবে না’ কথাটি ব্যবহার করা হয়। এটি একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ। এর জবাবে খালেদা জিয়া পরদিন বলেন ‘এমন আন্দোলন করা হবে যাতে সরকারের চুল উড়ে যাবে’। চুল উড়ে যাওয়া নামক কোন কিছু জাতি আগে কখনো শুনেনি। বেগম জিয়া এখানেও জননেত্রীর বক্তব্য থেকেই কথা ধার করেছেন। নিজ থেকে কিছু বলার সক্ষমতা এখনো উনার তৈরি হয়নি। হায়রে পরজীবীতা।
 
জননেত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি ফেসবুকে তার নিজের একটি পেজ খুলেছেন এবং এটি ব্যাপক জনপ্রিয়ও হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি এই পেজটাকে অনুমোদনও দিয়েছে। নিশ্চিত থাকতে পারেন অচিরেই খালেদা জিয়া অথবা তারেক জিয়াও ফেসবুক পেজ খুলবেন। অনুকরণ করতে হবে না ? আমি সেই পেজ এর অপেক্ষায় থাকলাম। মজার এক বিষয়ই হবে সেটা।


কথায় বলে, অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু ক্ষুদ্রাকায় তেলাপোকা ঠিকই টিকিয়া আছে। কথাটা বিএনপির জন্য শতভাগ প্রযোজ্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন