মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৩

“রক্তাক্ত বাংলাদেশঃ লাঞ্ছিত মানবতা”: ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি জামাত জোটের অপশাসন ও নৈরাজ্যের একটি ক্ষুদ্র স্মারক

২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপশাসন এবং নৈরাজ্যের ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়নতনের সামনের চত্বরে। "রক্তাক্ত বাংলাদেশঃ লাঞ্ছিত মানবতা" শীর্ষক এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে 'জাতীয় যুব পরিষদ'। তিনদিন ব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে আগামী একুশে আগস্ট পর্যন্ত। সময় করে একটি বারের জন্য হলেও ঘুরে যাওয়ার অনুরোধ রইল।

আমরা চাই ক্ষণিকের জন্য আপনি পিছনে ফিরে যান। ফিরে যান সেই নৃশংস সময়ে যখন প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় প্রকাশিত হতো মানবতাকে ভূ-লুণ্ঠিত করার বিভৎস সংবাদ। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারা বাংলাদেশ ছিলো ভয়াল মেঘমালার নিচে। কোলের শিশু থেকে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটি পর্যন্ত প্রতিনিয়ত আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকতেন। দেখে যান ২০০১ সালের নির্বাচন-উত্তর বাংলাদেশের ক্ষত বিক্ষত ছবি, রক্তাক্ত ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ছবি, লাঞ্ছিত মানবতার চিত্র।

আপনি আসুন। বিবেকের চোখ দিয়ে দেখুন কতোটা হিংস্র সময়ে বাস করেছে বাংলার মানুষ সেই সময়ে। ২০০১ থেকে ২০০৬- নরপশুদের ভয়াল থাবা অন্যদিকে ২০০৮ থেকে ২০১৩- মানবতা ও আইনের শাসনের পথে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া। আসুন। ছবিগুলো দেখুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন- আবার কি ফিরে যাবেন সেই শকুন সময়ে?

না।
ছবিগুলো নিয়ে কিছু বলতে চাই না আমরা। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, নিপীড়ন-নির্যাতনের এ ছবিগুলোই আপনার সাথে কথা বলবে। স্থির হয়ে থাকা চোখের সামনে তুলে ধরবে তাদের নির্মম অভিজ্ঞতার কথা।

না।
আপনি যে আলোকচিত্রগুলো দেখবেন সেগুলো উনিশশো একাত্তর সালের নয়। নির্যাতনের এ আলোকচিত্রগুলো ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে নেমে আসা ভয়াল অন্ধকারে তোলা। বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে সারা পৃথিবী যখন শান্তি আর প্রগতির পথে হাঁটা শুরু করেছে, বাংলাদেশকে তখন টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মধ্যযুগীয় বর্বরতায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় মুখ থুবড়ে পড়া মানবতার এক সামান্য উপস্থাপনা- ‘রক্তাক্ত বাংলাদেশ: লাঞ্ছিত মানবতা’।

না।
কোনো বহিঃরাষ্ট্রের আক্রমণের শিকার নয় ছবির চরিত্রগুলো। এ আলোকচিত্রগুলো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের হিংস্র, বর্বর আর কুৎসিত নির্যাতনের স্মারক। ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংসতার কথা স্মরণ করলে গা শিউরে ওঠে যে কোনো মানবতাবোধসম্পন্ন মানুষের। নির্যাতিত, নিহত মানুষগুলোর অপরাধ ছিলো, তাঁরা স্বাধীন রাষ্ট্রে নিজেদের স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগের গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চা করতে চেয়েছিলো। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অভিধানে ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি অনুপস্থিত। হত্যাকে উৎসব ভেবে তারা তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করে। ‘বিভৎসতা’-ই তাদের রাজনৈতিক সৌন্দর্য। বিএনপি-জামাত জোটের কাছে রাজনীতি মানে মিথ্যাচার, সরকার গঠন মানে জনগণ নয়, সন্ত্রাসীদের স্বার্থ রক্ষা।

না।
এ আলোকচিত্রগুলো সম্বন্ধে কোনো কথাই ‘জাতীয় যুব পরিষদ’ বলবে না। আমরা বিশ্বাস করি, যে চোখ দিয়ে আপনি এ আলোকচিত্রগুলো দেখবেন, তা আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না; যে কান দিয়ে আপনি এ ছবিগুলোর কথা শুনবেন তা আপনাকে প্রতারণা করবে না; যে বিবেককে সঙ্গে নিয়ে আপনি ‘রক্তাক্ত বাংলাদেশ: লাঞ্ছিত মানবতা’র গ্যালারিটি অতিক্রম করবেন, তা আপনাকে ভুল সিদ্ধান্ত দেবে না।

হ্যাঁ। আপনি ঠিক ধরেছেন।
‘জাতীয় যুব পরিষদ’ বিশ্বাস করে আসন্ন নির্বাচনে আপনার বিবেক, আপনার প্রতিটি ইন্দ্রিয় নিপীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে রায় দিবে। আপনি যখন যাবেন ভোটকেন্দ্রে, আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে পূর্ণিমার চোখ ঢেকে রাখা মুখচ্ছবি। সাত বছরের একরত্তি মেয়ে রজুফার বোবা দৃষ্টি। বিএনপি-জামাত জোটের হাতে কখনোই নিরাপদ নয় মানবতা, এ প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই আপনি ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন।

আপনার কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ। পাকিস্তানের চোখ দিয়ে নয়, বাংলাদেশের চোখ দিয়ে বাঙালির মানবতাকে দেখুন। মনে রাখবেন, বিএনপি-জামাত জোট হলো পাকিস্তানি বর্বর দূরবীণে চোখ রেখে চাঁন-তারা মার্কা বেঈমান পতাকা দেখার জোট। এরা বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। বাংলাদেশকে পরিণত করতে চায় সন্ত্রাসী আর জঙ্গিগোষ্ঠীর অভয়ারণ্যে।

তারপরও যদি আপনি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন, আপনার ভুলের কারণে যদি বিএনপি-জামায়াত জোট আবার কখনও ক্ষমতায় আসে, তবে মনে রাখবেন- এখানে প্রদর্শিত ১৩১ টি নির্যাতন-নিপীড়নের ছবির সাথে ১৩২ নম্বর ছবিটি হবে হয়তো আপনারই কোনো প্রিয় মানুষের ক্ষত-বিক্ষত কিংবা মৃত কোনো ছবি।
ভাবুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন। আপনি কী নিপীড়ন-নির্যাতন-বর্বরতা আর হিংস্রতার পক্ষে যাবেন?

জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
জয় হোক মানবতার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন