মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৩

রক্তে রঞ্জিত ২১শে আগস্ট



২১শে আগস্ট, ২০০৪। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গভীর কলঙ্কজনক দিন। বিএনপি-জামায়াত জোটের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চূড়ান্ত নিদর্শন প্রদর্শিত হয়েছিল এইদিন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে দেশ থেকে চিরতরে নির্মূল করে দেয়ার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে হায়েনা রুপী হাওয়া ভবন গং তার হিংস্রতম রুপ দেখিয়েছিল। গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগের সমাবেশে। অথচ আওয়ামীলীগের সেই সমাবেশ ছিল সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ বিরোধী শান্তিপূর্ণ সমাবেশ।  



সময় ৫টা বেজে ২২ মিনিট। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্য শেষ করছেন। ফটোসাংবাদিকদের অনুরোধে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়ালেন তিনি। ঠিক সেই সময় অস্থায়ী স্টেজ হিসেবে ব্যবহৃত ট্রাককে লক্ষ্য করে চারদিক থেকে একের পর এক গ্রেনেড ছুটে আসতে লাগল। স্টেজে অবস্থানকারী আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মানব ঢাল তৈরি করে রক্ষা করলেন তাঁদের প্রাণাধিক প্রিয় নেত্রীকে। গ্রেনেড হামলা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই জননেত্রীকে তুলে দেয়া হল তাঁর গাড়িতে। কিন্তু ঘাতকের বুলেট সেখানেই তাড়া করল তাঁকে। বুলেটে জর্জরিত হল নেত্রীর গাড়ি। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারালেন জননেত্রীর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় প্রাণে বেঁচে যান জননেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই হামলায় তাৎক্ষনিক ভাবে প্রাণ হারান আওয়ামীলীগের নিবেদিত প্রাণ ১৮ জন নেতাকর্মী। হাসপাতালে নেয়ার পর প্রাণ হারান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী, আপোষহীন নেত্রী আইভী রহমান সহ আরও ৬ জন। আহত হয়েছেন আরও অসংখ্য নেতাকর্মী। অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। এখনো অনেক নেতাকর্মী স্পিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁদের শরীরে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এই ঘৃণ্যতম নিদর্শন পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল। 



নৃশংস এই গ্রেনেড হামলা সংগঠিত হয়েছিল তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে। নূন্যতম নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিলনা সেদিন। হামলা পরবর্তী সময়ে পুলিশ আহতদের উদ্ধারে কোন ব্যবস্থা তো নেয়ই নি উপরন্তু টিয়ার শেল আর রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে উদ্ধারকাজে বাঁধা প্রয়োগ করে। এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় কিন্তু কারও বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর এই ঘটনার প্রেক্ষেতি বলেছিলেন উই আর লুকিং ফর শত্রু। কিন্তু কাউকেই খুজে বের করতে পারেননি তিনি। পারবেনই বা কিভাবে? এই ঘটনায় যে জড়িত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান। এই মামলায় পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীনেতা মুফতি হান্নান তার নিজের জবানবন্দীতেই এই গ্রেনেড হামলায় তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্ল্যেখ করেছেন। 



২১ শে আগস্টের এই গ্রেনেড হামলা কোন বিচ্ছিন ঘটনা ছিল না। এটা ছিল ৭৫ এর ১৫ই আগস্টেরই পরবর্তী রুপ। আওয়ামীলীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে চিরতরে নেতৃত্ব শূন্য করে দেয়াই ছিল এর লক্ষ্য। অবিলম্বে এই গ্রেনেড হামলার পিছনে দায়ী ব্যাক্তিদের খোজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। তা না হলে স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গী শকুনেরা আবারও হামলা চালাবে। ক্ষতবিক্ষত করবে এদেশের মানচিত্রকে, রক্তরঞ্জিত হবে লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা।  

1 টি মন্তব্য: