বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০১৩

ভালো নেই সোনাপুর গ্রাম

গ্রামের নাম সোনাপুর। নদী তীরের ছোট্ট একটি গ্রাম। জনবহুল এই গ্রামে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সৌহার্দপূর্ণ সহাবস্থান। গ্রামের মানুষজন খুবই সহজ সরল। কিন্তু তাই বলে বাইরের কারও মাতাব্বরি কখনই সহ্য করে নি।
এই গ্রামেরই দুই নামকরা পরিবার । মিয়া বংশ আর মোল্লা বংশ। গ্রামের মানুষজনের উপর এই দুই পরিবারেরই অগাধ প্রভাব প্রতিপত্তি। বলা যায় এই দুই বংশের কথাতেই পুরা গ্রাম চলে। এই দুই পরিবারের কোন এক পরিবার থেকেই প্রতিবার মেম্বার নির্বাচিত হয়। গ্রামের মানুষ জনও রসিক আছে। কাউরেই পরপর দুইবার চান্স না। এই ইলেকশনে মিয়া বংশ তো পরের ইলেকশনে মোল্লা বংশ। এভাবেই চলছিল বেশ।
সোনাপুর গ্রাম অবস্থিত আমতলী ইউনিয়নে। বারেক ভুইয়া ইউনিয়নের অবিসংবাদিত নেতা। অনেক বছর ধরে চেয়ারম্যান। পুরা ইউনিয়নের উপরই তার কঠোর নজর দারি। নজরদারিতে আছে সোনাপুর গ্রামও। অবশ্য এই গ্রামের প্রভাবশালী দুই বংশের সাথেই তার যোগাযোগ আছে। প্রতিবার মেম্বারি নিরবাচনের আগে দুই বংশের লোকেরাই তার দোয়া নিয়ে যায়। উনিও সবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। সহায়তার আশ্বাস দেন। দুই বংশের লোকেরাই উনাকে খুশি করার জন্য অনেক অঙ্গিকার করে আসে। কিন্তু মেম্বার হয়ে যাওয়ার পর গ্রামের লোকজনের চাপেই আর বারেক ভাইকে বেশি কিছু দেয়া হয় না।
বারেক ভাইয়ের অবশ্য সোনাপুর গ্রাম কিভাবে চলবে তা নিয়ে মাথাব্যাথা নাই। উনার চাওয়া হল সোনাপুর গ্রামের পাশে যে বিশাল চরটা জেগে উঠছে তার দখল নেয়া। এইটার দখল নিতে পারলে তার আশেপাশের সব গ্রামে তার আধিপত্য আরো সুদৃঢ় হয়। তাছাড়া সোনাপুর এর পাশের গ্রাম অচিনপুরে তার একজন ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি হচ্ছে। যেকোন সময় চেয়ারম্যান নির্বাচনে দাড়িয়ে যেতে পারে। এটাও তার একটা মাথাব্যাথার কারন।
উনি বুঝতে পারলেন মিয়া আর মোল্লা বংশ দিয়ে হবে না। এরা কখনোই উনাকে চরের দখল দিবে না, যত আশ্বাসই দিক। উনি ঠিক করলেন নতুন আরেকজনকে মেম্বার বানাবেন। বললেই তো আর হয় না। এটার জন্য অনেক প্ল্যান প্রোগ্রাম এর দরকার আছে। উনি সোনাপুর গ্রামের ইউনুস মাস্টারকে ঠিক করলেন। লোকটার পড়ালেখা আছে,চেহারা ছবি ও খারাপ না। বারেক ভাই ইউনুস সাহেবকে তার সভা সমাবেশে ডাকতে লাগলেন। দুই একটা পুরস্কার ও দিয়ে দিলেন।
লোক ত ঠিক হলো। এবার তো তাকে নির্বাচনে পাশ করাতে হবে। সমস্যা হল,সোনাপুর গ্রামের লোকেরা আবার মোল্লা বংশ আর ভুইয়া বংশের বাইরের কাউকে ভোট দেয়না। এখন উপায় একটাই। এই দুই বংশের মাঝে ঝামেলা লাগিয়ে দেয়া। এই দুই বংশের ঝামেলায় মানুশজন যখন অস্থির হয়ে যাবে তখন বারেক ভাই দরবার ডেকে ইউনুস সাহেবকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবেন। সোজা হিসাব। শত হইলেও ইউনুস ভাই শিক্ষিত লোক। বারেক ভাইও শান্তি প্রিয় মানুশ। উনি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তো আর সোনাপুর গ্রামে কোন ঝামেলা চলতে পারে না।
আপাতত এই অবস্থাতেই আছে সোনাপুর গ্রাম। সবই ঠিক আছে,শুধু মানুশগুলোই শান্তিতে নাই।

(এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্প,অন্যকোন অর্থ খুজতে যাবেন না। আমরা আদার ব্যাপারী,আমাদের জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কি ?)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন